সংখ্যালঘুদের উপর হামলা-মামলার প্রতিবাদে রাবিতে মানববন্ধন
দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু শিক্ষকদের ওপর ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সনাতনী শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাবৃন্দ। সোমবার (১৩ এপ্রিল) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন তারা।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ শিকদার বলেন, দীর্ঘদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মন্দির কমিটির সাথে যুক্ত ছিলাম। সেখানে শিক্ষার্থীদের সবসময় বলতাম অন্য ধর্মের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে সহযোগী মনোভাব তৈরি করতে হবে। আমি দেখেছি আমার ছাত্ররা কেউ অন্য ধর্মের প্রতি কখনও খারাপ মন্তব্য করেনি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থী নিজের শিক্ষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, হৃদয় মন্ডলকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। তাছাড়া ঘটনাগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়রি। কোন অভিযোগ প্রথমে বিক্ষোভ মিছিল, তারপর হামলা চালানো হয়? পরবর্তীতে দু’একজনকে গ্রেফতার করলেও কয়েকদিনের মধ্যেই মুক্তি দেওয়া হয়। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।
আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, বিজ্ঞান পড়াতে গিয়ে একজন শিক্ষককে কারাবরণ করতে হয়েছে, যা দেশের শিক্ষক সমাজের জন্য লজ্জাজনক। হৃদয় মন্ডল শুধু বিজ্ঞানের ব্যাখা দিয়েছেন। কিন্তু তার শিক্ষাকে ধর্মীয় দিকে পরিচালিনা করে হয়রানি ও হামলা করা হলো।
তিনি বলেন, আমি নিজে একজন মুসলিম। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে বলেছেন। অথচ পরিস্থিতি আজ ভিন্ন। দেশে ধর্ম নিয়ে রেষারেষি চলছেই। নওগায় স্কুল ড্রেস না পরে আসার কারণে শিক্ষিকার সামান্য শাসনকে ধর্মীয় দিকে পরিচালনা করে হামলা চালানো হলো। আমার মনে হয় এক সুযোগসন্ধানী মুক্তিযুদ্ধবিরোধী গোষ্ঠী এই কাজ সংঘটিত করছে। আমাদের তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
আরও পড়ুন: স্কুলে গেলেন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক উপ-উপাচার্য ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, জন্মগ্রহণের পর আমি জানতাম না আমি কোন ধর্মের। আমি তো মানুষ হিসেবে এই জায়গায় বসবাস করতে এসেছি। আমি তো জন্মসূত্রে হিন্দু। কি দোষ আমার? আমাকে যদি জন্মের আগে বলতো তুমি কোন ধর্মে যেতে চাও এবং তখন আমি যদি হিন্দু বেছে নিতাম, তাহলে আপনারা আমাকে দোষারোপ করতে পারতেন। কিন্তু আমি তো হিন্দু হয়েই জন্মগ্রহণ করেছি। এখানে আমাদের কি দোষ? অথচ বার বার হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের একটা পরিচয় ছিল আমারা বাঙালি। মুক্তিযুদ্ধ তো হিন্দু মুসলিম সবাই অংশ নিয়েছিল। তাহলে সংখ্যালঘুদের তাড়িয়ে দেওয়ার এতো প্রচেষ্টা কেন? এমতাবস্থায় সরকার তথা রাষ্ট্রকে অবিলম্বে এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জোরদাবি জানান তিনি।
ফারসি বিভাগের শিক্ষার্থী দীপু রায়ের সঞ্চালনায় মানববন্ধনটি উপস্থিত ছিলেন মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক শুভ্রা রানী চন্দ, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক রবিউল ইসলাম, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শফিকুন্নবী সামাদী, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ আশরাফুল ইসলাম খানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মচারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ।