ঢাবির সূর্যসেন হল বিতর্ক ধারা’র কমিটি নিয়েই বিতর্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টারদা সূর্যসেন হলের বিতার্কিকদের সংগঠন ‘সূর্যসেন হল বিতর্ক ধারা’র ২০২১-২২ সেশনের কমিটি নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটছে না। মূলত কমিটি ঘোষণা করার পরপরই এই বিতর্ক শুরু হয়।
এ বছরের ২৪ মার্চ ঢাবির ইসলাম শিক্ষা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আলম বাদশাকে সভাপতি ও আরবি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. সোহানকে সাধারণ সম্পাদক করে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এই সংগঠনটির সভাপতি নাজমুল হুদা আজাদ, নির্বাচন কমিশনার মো.মামুন হোসেন ও মো. বনি আমিন এবং হলের আবাসিক শিক্ষক ও মডারেটর আহাম্মদ উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছিল।
তবে এদিনই এই কমিটিকে অযোগ্য, অনিয়মিত ও বিতর্কিতদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি নয় উল্লেখ করে পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আলী নেওয়াজ তুষারকে সভাপতি, মার্কেটিং বিভাগের মো. তানভীর হোসেন শান্তকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ অমি।
এই কমিটি ঘোষণার পরপরই অমি হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মারিয়াম জামান সোহানের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে হলে শোডাউন দেন। পরবর্তীতে ছাত্রলীগের ক্ষমতা ব্যবহার করে বিতর্ক ধারার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। যা পুরোপুরি সংগঠন বিরোধী ও বিতর্ক আদর্শ বিরোধী বলে জানান হলের একাধিক বিতার্কিক। তবে বর্তমানে হলের বিতর্ক সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর ফলে সাধারণ বিতার্কিকরা বিপাকে পড়েছেন।
এ নিয়ে সাবেক একাধিক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা হলেও তারা পরবর্তী কমিটিকে অবৈধ বলে উল্লেখ করেন।
তবে পাল্টাপাল্টি কমিটির বিষয়ে হল প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মকবুল হোসেন ভূঁইয়াকে হলের একদল বিতার্কিক স্মারকলিপি দিয়েছেন। এ ঘটনায় বিষয়টি হল প্রশাসন পর্যন্ত গড়ালে হল প্রশাসন উভয় কমিটি স্থগিত ঘোষণা করেন ও এক সপ্তাহ পর্যন্ত যেকোনো ধরণের বিতর্ক ও সাধারণ সভা বন্ধ রাখতে বলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক এক সভাপতি বলেন, সূর্যসেন হল বিতর্ক ধারায় আধিপত্য বজায় রাখতে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মারিয়াম জামান খান (সোহান) আবু সাইদ অমিকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটতে চাচ্ছেন। তিনি বিতর্ক ধারার মতো একটি অরাজনৈতিক সংগঠনকে রাজনীতিকরণ করতে চাচ্ছেন।
আরও পড়ুন : মাউশির ক্যাশিয়ার পদে ভাইভা দিয়েছেন ছাত্রলীগের সেই নেতা
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে মারিয়াম জামান খান বলেন, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমার সাথে বিতর্ক ধারার ন্যূনতম কোন সম্পর্ক নেই। আমাদের প্রোগ্রাম নিয়ে আমার ব্যস্ত থাকতে হয়। বিতর্ক ধারা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কই!
এ ব্যাপারে সংগঠনের সভাপতি নাজমুল হুদা আজাদ বলেন, আমরা গঠনতন্ত্র মেনে কমিটি ঘোষণা করেছি। সে জায়গায় একদল বিপথগামী গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে একটি কমিটি ঘোষণা করেছে। যা পুরোপুরি অন্যায়। কমিটি গঠন করতে গঠনতন্ত্র যথাযথ পালন করা হয়েছে।
তবে সূর্যসেন হল বিতর্ক ধারার মডারেটর ও হলের আবাসিক শিক্ষক আহাম্মদ উল্লাহ্ বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী সময়ে আলাপ আলোচনা করা হবে বলে জানান।
এ দিকে ক্লাবে তালা লাগানোর বিষয়ে জানতে চাইলে আবু সাঈদ অমি তা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি তালা লাগিয়েছি। কিন্তু আগে লাগাইনি। আজাদ (সভাপতি) আগে লাগিয়েছে। এরপর আমি। এখনো আমার দায়িত্ব শেষ হয়নি। আমি এখনো সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছি। আমার দায়িত্ব হস্তান্তর করি নাই।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই কমিটি দেওয়ার সময় কমিশনার, মডারেটর কেউ আমার কোন প্রকার মতামত নেয়নি। যারা নিয়মিত বিতার্কিক না তাদেরকে এই কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।
শুধু আপনার স্বাক্ষরে কমিটি দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত এমন প্রশ্নের জবাবে অমি বলেন, আমাদের এই কমিটির আগের যে কমিটি দেওয়া হয়েছিল সেখানে যারা নিয়মিত বিতার্কিক না তাদেরকে স্থান দেয়া হয়েছিল। যার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ রয়ে গিয়েছিল। এবারো সেই একই কাজ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় সাধারণ শিক্ষার্থী ও নিয়মিত বিতার্কিকদের স্বার্থে আমি কমিটি দিতে বাধ্য হই।
তবে নির্বাচন কমিশনার বিতর্ক ধারার বনি আমিন আকিফ বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, আমাদের দেওয়া কমিটিতে কোনো ধরণের অসঙ্গতি নেই। ২০ বছর ধরে মেনে আসা গঠনতন্ত্রের প্রতিটি ধাপ অনুসরণ করে আমরা কমিটি ঘোষণা করেছি। পরে নতুন করে যারা আরেকটা কমিটি দিয়েছে তাদের হয়ত ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে। আমরা প্রভোস্টকে বিষয়টি জানিয়েছি বাকিটা হল প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মকবুল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এটা নিয়ে আমি সন্ধ্যায় বসবো। তারপর এ বিষয়ে আমি বলতে পারবো। এখন কিছু বলতে চাই না।