বাইকে ঘুরাতে নিয়ে জাবি ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ
বাইকে ঘুরাতে নিয়ে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এ নিয়ে প্রক্টরের কাছে অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন অভিযুক্ত ছাত্রও। প্রক্টর অফিস জানিয়েছে, ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) অভিযোগ দেন ছাত্রীটি। লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী বলেন, অভিযুক্ত ছাত্র আমার পূর্ব পরিচিত। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি আমাকে ফোন করে দেখা করতে বলেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তিনি মোটরবাইক নিয়ে আমার কাছে আসেন। পরে তার বাইকে উঠি। আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার হয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপায়ন সিটিতে নিয়ে যান। ফ্লাইওভারে উঠার পর মোটরবাইক চালানো অবস্থায় তিনি আমার শরীর স্পর্শ করার চেষ্টা করেন। পরে রেস্টুরেন্টে নেয়ার কথা বলে একটি বাসায় নেয়ার চেষ্টা করলে চিৎকার করে রোক জড়ো করি। পরে তাদের সাহায্যে সেখান থেকে বের হয়ে আসি।
ঘটনাস্থলে থাকা সোহেল জানান, ‘আমি ভবনের লিফটে করে নামছিলাম। নিচে মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞাসা করে উপরে রেস্টুরেন্ট আছে কিনা? এটি একটি আবাসিক এলাকা এবং উপরে রেস্টুরেন্ট নেই বললে মেয়েটি তার সাথে থাকা ছেলেটিকে প্রেশার ক্রিয়েট করে। ফলে ছেলেটি উবার ডাকে এবং মেয়েটি উবারে করে চলে যায়।
ছাত্রীর অভিযোগের পর অভিযুক্ত শিক্ষার্থীও প্রক্টরের কাছে একটি অভিযোগ দেন। সেখানে তিনি বলেন, মেয়েটির সাথে এর আগেও একবার বাইকে ঘোরাঘুরি করেছেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আবারও ঘুরার জন্য সাক্ষাৎ করা হলে মেয়েটি সচেতনভাবেই সম্মতি জ্ঞাপন করে। তাকে বাইকে নিয়ে ঢাকার মহানগর থেকে বিভিন্ন রুট হয়ে নারায়ণগঞ্জের রুপায়ন মডেল টাউনে পৌছান। পথিমধ্যে মেয়েটি ‘অযাচিত’ এবং ‘অশোভন’ আচরণ শুরু করলে ছেলেটি 'বিব্রতবোধ' করে এবং উবারের মাধ্যমে তাকে মেয়ের বাসায় পৌছায় দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
আরও পড়ুন- ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলা করুন’
অভিযোগপত্রে ওই ছাত্র আরও বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি মীমাংসার জন্য রসায়ন বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের ছাত্রী ও বেগম সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আনিকা মাহিয়া আমাকে জাহানারা ইমাম হলের গেস্টরুমে ডাকে। সেখানে জাহানারা ইমাম হলের রসায়ন বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী আফরিন পাপড়িও উপস্থিত ছিলেন। তারা আমাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ স্বীকার করতে পীড়াপীড়ি করেন। আমি দোষ স্বীকার না করলে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে আমাকে বহিস্কার করা হবে বলে ভয় দেখায়। এসময় তাদের ইন্ধনে অভিযোগকারী নারী শিক্ষার্থী দু’বার আমাকে জুতা দিয়ে মারতে আসে। তারা আমার কথোপকথন রেকর্ড করে। আনিকা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
আরও পড়ুন- হল কমিটি নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে
এ বিষয়ে আনিকা বলেন, ভুক্তভোগী ছাত্রী ছাত্রলীগ কর্মী। সে আমাদের ঘটনার বিষয়ে অবহিত করে। বিষয়টির সত্যতা জানতে আমি অভিযুক্ত ওই ছেলেকে ফোন করি। সে স্বেচ্ছায় আমার সাথে দেখা করতে চায়। দেখা করতে আসলে তাকে জাহানারা ইমাম হলের গেস্টরুমে আসতে বলি। অভিযোগকারী নারী শিক্ষার্থী উত্তেজিত হয়ে তাকে জুতাপেটা করতে গেলে আমি তা করতে দেই নাই। পরে ওই ছাত্র চলে যায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, অভিযোগপত্র দুইটি পেয়েছি। ওই মেয়ের সাথে কথাও হয়েছে। অভিযোগটির সত্যতা খতিয়ে দেখে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।