রাবির জিয়া হলের গেটে তালা, প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ডাইনিংয়ের খাবারে ‘কটন বাড’ পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হলের গেটে তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে ছাত্রলীগ নেতার (অনাবাসিক) কক্ষে নতুন করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সিট দেওয়া নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে আন্দোলন শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত হল গেটে তালা লাগিয়ে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেন তারা।
তবে খাবারে কটন বাড পাওয়ার অভিযোগকারী সেই শিক্ষার্থীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এদিকে ডাইনিংয়ের একাধিক কর্মচারী দাবি করেছেন, খাবারে এরকম কিছু পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে পরে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের সাথে আলোচনায় হলেও কোন সমাধান হয়নি।
জানা গেছে, সম্প্রতি জিয়া হলে সিট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে হল প্রশাসন। এতে অনেক ছাত্রলীগ নেতার (অনাবাসিক) কক্ষে নতুন করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী জানায়, ‘হলে আসন বরাদ্দ দেওয়ার পর হল প্রসাশন আমাকে আমার বরাদ্দকৃত আসনে তুলে দেন। এদিন রাতে ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ নিজে না এসে অন্যদের মাধ্যমে আমাকে হল থেকে নামিয়ে দেয়। রাতে রাশেদ ভাই আমার সাথে দেখা করতে চেয়েও পরে আর দেখা করেননি। আমি আমার মেস ছেড়ে দিয়েছি। এখন আমার থাকার জায়গা নেই। ’
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবং তালা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাশেদ বলেন, ‘আমি কোনো শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেইনি। আর আজকের বিষয়টি নিয়ে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তালা দিয়েছেন। আমরা তাদের যৌক্তিক দাবিগুলোর সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলন করেছি। ’
এদিকে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে জিয়াউর রহমান হলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত হন। ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনিসহ ছাত্রলীগের অন্য নেতাকর্মীরা। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা মো. তারেক নূর, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ সুজন সেন ও শাখা ছাত্রলীগের একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকের শুরুতে কিছুটা সময় রাউটার ও খাবারের মান নিয়ে আলোচনা হলেও, বৈঠকের বেশিরভাগ সময় সিট বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সিট বরাদ্দ নিয়ে উচ্চস্বরে কথা বলতে শোনা যায়।
এ সময় গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করে যদি সুযোগ-সুবিধা না পাই তাহলে কেমনে হবে?’
হল প্রাধ্যক্ষের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি ফাস্ট ইয়ারের ছেলেদের সিট দিচ্ছেন, অথচ আমাদের থার্ড ইয়ার ও ফোর্থ ইয়ারের ছেলেরা, যারা আমাদের মিছিল-মিটিং করে, তারা সিট পাচ্ছে না। আমাদের সুপারিশ অনুযায়ী আপনি সিট দেননি। এমনকি আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার রুমেও আপনি সিট বরাদ্দ দিয়েছেন।’
এ সময় তার সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা উচ্চস্বরে সম্প্রতি হল প্রশাসন থেকে প্রকাশিত সিট বরাদ্দের নোটিশ বাতিলের দাবি জানান।
গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আপনারা আগামী এক মাসের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো মেনে না নিলে কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়া হবে‘
এ সময় বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে সমাধানের আহ্বান জানান ছাত্র উপদেষ্টা। আগামী রবিবার প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বৈঠক শেষ করেন। এর প্রায় ১০ মিনিট পর ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরসহ প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরা বের হয়ে আসেন।
বৈঠক শেষে প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলো জানিয়েছেন। আমরা এই নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করবো।
ছাত্রলীগের সিট বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বলেন, সিট বরাদ্দ নিয়ে কিছু ঝামেলা হয়েছে। এগুলো পুনর্বিবেচনা করে ঠিক করা হবে। ছাত্রলীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আগামী রবিবার বৈঠক হবে। সেখানে বিষয়টি সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রক্টর।
গোলাম কিবরিয়া বলেন, ছাত্ররা হলের ডাইনিংয়ে খাবার মান বৃদ্ধি, ওয়াইফাই সমস্যা, খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আন্দোলন করছিলেন। এসব বিষয়ে জানতে পেরে জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগ তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। পরে আমাকে সেখানে ডাকলে বৈঠকে বসি। বৈঠকে আমি বলি, দৃশ্যমান কোনও উন্নয়ন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা যদি গেটে তালা লাগিয়ে দেয়, তাহলে ছাত্রলীগ যৌক্তিক আন্দোলন হিসেবে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করবে।
সিটের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা নিয়ে পরে আলোচনা করেছি। তবে কোনও সমাধান হয়নি। আগামী রবিবার প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে হবে। তবে হলে সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম কিবরিয়া এড়িয়ে যান।
সার্বিক বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ সুজন সেন বলেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বেশকিছু দাবি জানিয়েছেন। আগামী রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। সেখানে সবকিছুর সমাধান হবে।