কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধন করার নিয়ম নেই: জাবি প্রো-ভিসি
বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্যার ডাকার নিয়ম বা রীতি নেই বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নুরুল আলম।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ব্যতিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে 'স্যার' সম্বোধন করার কোন নিয়ম ও রীতি আগে কখনোই ছিলনা, এখনো নেই। অতীতে আমরা শুধুমাত্র শিক্ষকদেরই 'স্যার' সম্বোধন করতে দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব কর্মকর্তারা এরকম আচরণ করেন তাদের বিষয়টি আমরা দেখবো।’
সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকদের ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করার রেওয়াজ রয়েছে। শিক্ষক ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাই বলে সম্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অফিসের কতিপয় কর্মকর্তারা ‘স্যার’ সম্বোধন শুনতে চান এবং স্যার না ডাকলে মনোক্ষুণ্ণ হন বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি অফিসের কর্মকর্তারা তাদের ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতে নানাভাবে চাপ দেন। ‘স্যার’ সম্বোধন না করলে শিক্ষার্থীদের সাথে অসহযোগিতামূলক আচরণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়, রেজিস্ট্রার কার্যালয়সহ কয়েকটি জায়গার কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধন না করলে তারা ছাত্র-ছাত্রীদের সেবা প্রদানে অসহযোগিতামূলক আচরণ করেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
আরও পড়ুন- ‘স্যার’ ডাক শুনতে চান জাবির কর্মকর্তারা
ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় কাজে রেজিস্ট্রার অফিস ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে গিয়ে কর্মকর্তাদের ভাই সম্বোধন করলে তারা সেবা দিতে অসহযোগিতা করেন। অনেক সময় রেগে গিয়ে খারাপ ব্যবহারও করেন এবং স্যার ডাকতে পরোক্ষভাবে চাপ সৃষ্টি করেন। বিশেষ করে ক্যাম্পাসে নবাগত প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে এমন ঘটনা বেশি ঘটে।
এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাস করে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিরত অনেক কর্মকর্তাই শিক্ষার্থীদের 'তুমি' বলে সম্বোধন করে থাকেন বলে জানা গেছে। যদিও অফিসিয়াল কাজে কোন শিক্ষার্থী গেলে তাকে 'তুমি' সম্বোধন করার সুযোগ নেই কর্মকর্তাদের। এমনকি ব্যক্তিগত সম্পর্ক না থাকলে ক্যাম্পাসে কর্মরত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোন শিক্ষার্থীও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সেবা প্রদানের সময় 'তুমি' সম্বোধন করার সুযোগ নেই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাবি ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, "সংবিধানের প্রথম ভাগে ৭-এর (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে।আমাদের সংবিধানের জনগণের সার্বভৌমত্ব, সুপ্রিমেসি এবং অধিকার উচ্চকিত হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও এ দেশে জনগণের সুপ্রিমেসি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। বরং পাবলিক সার্ভেন্টদের সুপ্রিমেসি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। একমাত্র ছাত্র ও শিক্ষক ছাড়া আর কাউকে অফিস বা অন্যত্র সবখানে সবাইকে স্যার বলার রীতি তুলে ফেলা উচিৎ বলে মনে করি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ফরিদ আহমদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে কে কাকে কিভাবে সম্বোধন করবে সেটা একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। কাউকে স্যার' সম্বোধন করার জন্য চাপ প্রয়োগের সুযোগ নেই। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের কোন কর্মকর্তা এরকম আচরণ করছে এ মর্মে কোন শিক্ষার্থী অভিযোগ করলে আমি বিষয়টি দেখবো। এ বিষয়টি আমি আগে জানতামনা। গতকালই শুনলাম। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে অনেক পরিবর্তন সাধন করেছি। শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে সেবা পায় সে ব্যবস্হা করেছি। 'স্যার' সম্বোধন নিয়ে এরকম ঘটনা ঘটলে আমাকে জানাতে হবে। এ বিষয়ে আমি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করবো।’
জাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কর্মকর্তাকে স্যার ডাকার নিয়ম নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদেরকেই স্যার বলে সম্বোধন করা হয়। বাকি যারা আছেন তাদের সম্পর্কের জায়গা থেকে বিভিন্ন ভাবে ডাকা হয়। স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও কর্মচারীদেরকে সাধারণ মানুষের সেবক হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। দেশের সংবিধানেও প্রজাতন্ত্রের কোন কর্মকর্তাকে স্যার ডাকার বিধান রাখা হয়নি। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা হিসেবে আছেন তাদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। 'স্যার' সম্বোধন না করলে অসহযোগিতা করা কিংবা জোর করে সম্বোধন আদায় করার কোন সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে ভুক্তভোগী হলে সেক্ষেত্রে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে যে ভূমিকা পালন করতে হয় সেটা আমরা অবশ্যই করবো।’