বিভাগের অসঙ্গতি নিয়ে অভিযোগ করে বিপাকে শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টেলিভিশন, ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের ২য়, ৪র্থ, ৮ম সেমিস্টার এবং মাস্টার্সের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়ে স্থগিত করা হয়েছে ওই বিভাগের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষা। গতকাল সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিভাগের চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি জানানো হয়। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অনেকের অভিযোগ, বিভাগের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের কাছে অভিযোগ দেওয়া ও ছাত্র উপদেষ্টার সাথে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য চেয়ারম্যান হাবিবা রহমান ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই এমনটা করেছেন। যদিও বিভাগীয় চেয়ারম্যান এ অভিযোগটি নাকচ করেছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, ষষ্ঠ সেমিস্টার ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর মাসে শুরু হয়েছে। করোনা সংকটের কারণে আগে পরীক্ষা না নিতে পারলেও অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কিছুদিন ক্লাস করিয়ে ডিসেম্বরে সেমিস্টার ফাইনাল নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এসময় নিয়মিত ক্লাস তো নেওয়া হয়নি বরং পরীক্ষাও পেছাতে পেছাতে ছয় মাসের এক সেমিস্টারের সময় ১৪ মাস পার হতে চললেও পরীক্ষা নেয়া হচ্ছেনা। অথচ অন্যান্য বিভাগে ষষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষা নিয়ে ফলাফলও প্রকাশ করে ফেলছে।
৫ম ব্যাচ অর্থাৎ ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের এক শিক্ষার্থী এ ব্যাপারে বলেন, আমার মনে হয় পুরো ব্যাচের প্রতি আক্রোশ থেকেই বিভাগ আমাদের পরীক্ষা স্থগিত করেছে৷ গতকাল আমরা ছাত্র উপদেষ্টার সাথে বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে কথা বলেছিলাম। সেই সাথে চেয়ারপার্সনের ক্লাস না নেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ করেছিলাম।
আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা চাই, আমাদের দ্রুত পরীক্ষা নিয়ে এই প্রহসনের অবসান হোক। যাদের এক সেমিস্টারের ফি বাকি, তারা যেন মুচলেকা দিয়ে পরীক্ষা দিতে পারে৷ যেমনটা আগেও হয়েছে বিভাগে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টেলিভিশন, ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান হাবিবা রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের ব্যক্তিগত কোন আক্রোশ নেই। আমাদের সাথে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক খুবই ভালো।
“তবে একটা বিষয় একটু খারাপ লাগে সেটি হল, আমি ২০১৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দেখেছি, যখনই ওদের পরীক্ষার সময় আসে তখনই এই টাকা-পয়সা নিয়ে আমার কথা বলতে হয়। যেটি আমার জন্য খুবই বিব্রতকর। অন্যান্য ব্যাচ বা সেমিস্টারের পরীক্ষা কিন্তু ঠিকই নেওয়া হচ্ছে। ওদেরকে আমরা বলেছি যে, তোমাদের যেহেতু সমস্যা হচ্ছে তাহলে তোমরা আরেকটু সময় নাও।”
তিনি বলেন, এই ব্যাচের অধিকাংশেরই এক সেমিস্টারের ফি বাকী আছে। আর দুই সেমিস্টার এমনকি তিন সেমিস্টারের ফিও দেয়নি এমন সংখ্যাও এই ব্যাচে বেশি। অনেক শিক্ষার্থী আছে, যারা দিতে পারার সামর্থ্য বা পরিবেশ থাকা স্বত্তেও দিচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বিভাগে ২য় সেমিস্টারের পরীক্ষা হচ্ছে, ৪র্থ ও ৮ম সেমিস্টারসহ মাস্টার্সের পরীক্ষাও হচ্ছে। কিন্তু ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষা কেন হচ্ছেনা? নিশ্চয়ই এখানে কোন একটা কারণ রয়েছে। অন্যান্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরা কিন্তু বিভাগের নিয়ম মেনেই পরীক্ষা দিচ্ছে।
ভুক্তভোগী ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তাদেরও তো সেই ডিসিপ্লিন মানতে হবে। একটা সেমিস্টারের ফি বাকী থাকলেও হয়। কিন্তু তারা যদি ২/৩ সেমিস্টারের ফি বাকি রাখে, তাহলে তো অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও এরকম করবে।
জানা যায়, ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা গত রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন বরাবর কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে একটি অভিযোগপত্র প্রদান করেছিলেন। অভিযোগপত্রের অনুলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এবং ওই বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছেও দেয়া হয়।
অভিযোগপত্রে তাদের দাবিগুলো হল-
১) বিভাগ কর্তৃক আদায় করা সকল ফি এর বিপরীতে খাতওয়ারী টাকার পরিমাণ উল্লেখপূর্বক রশিদ প্রদান করতে হবে;
২) করোনাকালীন অনলাইনে চলা সকল সেমিস্টার ফি মওকুফ করতে হবে;
৩) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো ও তাত্ত্বিক এবং ব্যাবহারিক কোর্স বিবেচনা করে প্রতিটি সেমিস্টারে সামঞ্জস্যপূর্ণ অভিন্ন সেমিস্টার ফি প্রচলন। এছাড়া কেউ সেমিস্টার ফি দিতে অসমর্থ হলে তার অবস্থা বিবেচনাপূর্বক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের নিঃশর্ত সুযোগ প্রদান করতে হবে;
৪) বিভাগীয় শিক্ষকদের যথা সময়ে ক্লাস নেয়া নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া শিক্ষক মূল্যায়নের ব্যবস্থা চালু করতে হবে;
৫) বিভাগের রিসোর্সসমূহ উন্নত করতে হবে। রিসোর্স প্রাপ্তি সহজলভ্য করতে হবে। উল্লেখ্য, এনিমেশন ল্যাব থাকলেও ল্যাব ডিরেক্টর বা ল্যাব এটেন্ড্যান্ট নেই।