১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:৪২

‘ঘ’ ইউনিট বাতিলের সিদ্ধান্ত আদেশ পরিপন্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষকরা। অনুষদের শিক্ষকরা বলছেন, ইউনিট বাতিলের সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ পরিপন্থী। তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখানে আদেশের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি সাধারণ ভর্তি কমিটির এক সভায় ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ‘ঘ’ ইউনিট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বলা হয়, এ ইউনিটের পরীক্ষা ‘খ’ ইউনিটের মাধ্যমে নেয়া হবে। ওই সভায় ইউনিট বাতিলের নীতিমালা প্রণয়নের জন্য একটি সাব কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুল বাছির।

অধ্যাপক আব্দুল বাছির বলেন, শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিভাগ পরিবর্তনের জন্য বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীরা কলা অনুষদের অধীনে অর্থাৎ ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। সেখানে অন্য বিভাগ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা কীভাবে আসন পাবে সে বিষয়ে নীতিমালা তৈরির জন্য কমিটি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- ঢাবিতে ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল, জানেন না অনুষদের শিক্ষকরাই

অনুষদের বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর ডিনস কমিটির বিশেষ সভায় পরীক্ষার বোঝা কমানোর কারণ দেখিয়ে ঘ ইউনিট বাতিলের সুপারিশ করা হয়। ওই সভায় বিষয়টি এজেন্ডায় না থাকলেও উপাচার্য নিজে থেকেই এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এতে সম্মতি দেন কলা অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবু দেলোয়ার হোসেন ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ। যদিও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এর বিরোধীতা করেন।

পরে অনুষদের শিক্ষকরা সভা করে ‘ঘ’ ইউনিট রাখার পক্ষে মত দেন। সেটি উপাচার্যকে পাঠানো হয়। কিন্তু সেই প্রস্তাব আমলে নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিষদে ‘ঘ’ ইউনিট বাতিলের সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

ইউনিট বাতিলের সিদ্ধান্ত এভাবে নেয়াকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম। ফেসবুকে নিজের ওয়ালে এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘ঢাকা বিশ্ব‌বিদ‌্যালয়ে 'ঘ' ইউনিট বাতিল প্রশ্নে ডীনস কমিটির সিদ্ধান্তু এখতিয়ারবর্হিভূত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অর্ডিনেন্স মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পর্যায়ের ভর্তি-পরীক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট একাডেমিক কমিটিসমূহের। অর্ডিনেন্স মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে একটি এডমিশন কমিটি ভর্তি-পরীক্ষা সম্পন্ন করার দায়িত্ব পালন করবে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১৬টি বিভাগের ১৬টি একাডেমিক কমিটি 'ঘ' ইউনিট বাতিলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সুতরাং অনুষদের ১৬টি একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে 'ঘ' ইউনিট বাতিল করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অর্ডিনেন্স পরিপহ্নী।’

আরও পড়ুন- ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিট বাতিলে বির্তক ঘরে-বাইরে

বিশ্ববিদ্যালয়ের নথি থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর ডিনস কমিটির বৈঠকের পরে ভর্তি কমিটি পরবর্তীতে ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ করেছিলেন। পরবর্তীতে, ওই বছরের ১৬ আগস্ট একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষাগুলো সম্পূর্ণ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে সাবেক ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলছেন, ‘একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে ঘ ইউনিটের পরীক্ষা বাতিলের বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আমাদের অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন।’

এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, অনুষদের শিক্ষকরা ডিনের সঙ্গে এ বিষয়ে বসেছিলাম। সেখানে বিভাগের চেয়ারম্যানরাও উপস্থিত ছিলেন। আমরা ঘ ইউনিট রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলাম।

ঘ ইউনিট বাতিলের সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. তানজীম উদ্দিন খান বলেন, অনুষদের শিক্ষকদের প্রস্তাব উপেক্ষা করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যারা এই অনুষদের স্টকহোল্ডার তাদের সাথে কোন ধরনের আলোচনা করা হয়নি। অনেকটা গায়ের জোরেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে শুধু এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করা হবে কেন? ভোগান্তি কমাতে চাইলে কেন্দ্রীয়ভাবে একটা পরীক্ষাই নেয়া হোক। সেটি যদি না করা হয় তাহলে ঘ ইউনিটকে আলাদাভাবে তাদের পরীক্ষা নিতে দেয়া হোক। 

গত শিক্ষাবর্ষে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে মোট ১ হাজার ২০৭ জনের মধ্যে ৬১৪ জন শিক্ষার্থী এসেছেন ঘ ইউনিট থেকে। আবার ঘ ইউনিটে থেকে ভর্তি হওয়া মোট ১ হাজার ৫৭০ জনের প্রায় ৩৯ শতাংশ ভর্তি হয়েছেন এ অনুষদে। যা অনুষদগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। কলা অনুষদে ভর্তি হয়েছিলো ৩৩ শতাংশ আর আইন অনুষদে মাত্র ৪ শতাংশ।