ঢাবিতে ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল, জানেন না অনুষদের শিক্ষকরাই
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনুষদের শিক্ষকরাই। শিক্ষকদের অভিযোগ, তাদের মতামত না নিয়েই ইউনিটটি বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলছেন, যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অনুষদের বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর ডিনস কমিটির বিশেষ সভায় পরীক্ষার বোঝা কমানোর কারণ দেখিয়ে ঘ ইউনিট বাতিলের সুপারিশ করা হয়। ওই সভায় বিষয়টি এজেন্ডায় না থাকলেও উপাচার্য নিজে থেকেই এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সঙ্গে সঙ্গেই এতে কলা অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবু দেলোয়ার হোসেন ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ সমর্থন জানান। যদিও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এর বিরোধীতা করেন।
বিষয়টি নিয়ে একই বছরের ৯ নভেম্বর আলোচনায় বসেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকরা। সে সময় ঘ-ইউনিট বহাল রাখার পক্ষে অনুষদের ১৬টি বিভাগের পক্ষ থেকেই মতামত দেওয়া হয়। এই মত রেজ্যুলেশন আকারে উপাচার্যের দপ্তরে পাঠানো হয়েছিলো। তবুও ২৩ নভেম্বর সাধারণ ভর্তি কমিটি সভায় ঘ-ইউনিট বাতিলে ডিনস কমিটি’র সুপারিশই বহাল রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিষদে ঘ-ইউনিট বাতিলের সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ঘ ইউনিট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াটা খুবই অগণতান্ত্রিক। যারা ঘ ইউনিটের স্টকহোল্ডার তাদের সাথে কোনো আলোচনা না করে উপর থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এটা আসলে আমার কাছে খুব ভালো একটা বার্তা দেয় না।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত সবার সাথে আলোচনা করে নেওয়া উচিৎ। একতরফা করা উচিৎ নয়। আমরা রাখতে চেয়েছিলাম। এটা নিয়ে অনুষদের শিক্ষকরা মতামতও জানিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক এটা হচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ক ইউনিটে, মানবিকের শিক্ষার্থীদের ‘খ’ ইউনিটে, বাণিজ্যের শিক্ষার্থীদের ‘গ’ ইউনিট, বিভাগ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ঘ ইউনিট এবং চারুকলার জন্য চ ইউনিটের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হত। ‘ঘ’ ইউনিটের মাধ্যমে মূলত বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিকের শিক্ষার্থীরা উচ্চ মাধ্যমিকের বিভাগ পরিবর্তন করে অন্য বিভাগের বিষয়গুলোতে এতোদিন ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেতেন।
এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি বর্তমান ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান। তবে সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, উচ্চশিক্ষার দরজা আমরা বন্ধ করে দিতে পারিনা। আমাদের ঘ ইউনিটে সিট সংখ্যা খুবই কম কিন্তু সম্মিলিতভাবে সিট বেশি। আমি মনে করি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ স্বতন্ত্রভাবে পরীক্ষা নিতে পারে। কারণ এখানে ১৬টি বিভাগ আছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি ঘ ইউনিট বন্ধ করতে চায় তাহলে আমি মনে করি তারা যে পদ্ধতিতে আগাচ্ছে তা একটুকুও গণতান্ত্রিক হয়নি। আমাদের অনুষদে প্রায় তিনশ জন শিক্ষক রয়েছেন। তাদের সাথে উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ অন্যান্য যারা আছেন তারা ওপেন বৈঠকে বসুক। আমরা উচ্চ শিক্ষায় গুণগত বিষয়টি দেখতে চাই। কিন্তু আমরা যদি সেটাকে স্থগিত, সংকুচিত এবং বন্ধ করে দেই তা কাম্য নয়।