রাবি হবে ‘মডেল’ বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘মডেল’ বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। তিনি বলেছেন, একটা সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় যেমন হওয়া উচিৎ, তেমনি হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। শুক্রবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
রাবি উপাচার্য বলেন, রাবিকে আমরা মডেল বিশ্ববিদ্যালয় বানাতে চাই। এখানে আমি উপাচার্য হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত হয়ে থাকতে চাই না। আমি একজন শিক্ষক, আমার পরিচয় শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আমাকে শিক্ষক হিসাবে, তাদের অভিভাবক হিসেবে চিনবে। তাদের যত চাওয়া-পাওয়া থাকবে, তাদের চাওয়া পাওয়াগুলো যৌক্তিক হলে সবকিছুই আমরা পূরণ করবো।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্যদের কর্মকাণ্ড সারাদেশের মানুষের মাঝে যেমন নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করেছে। তেমনি সরকারের উচ্চ মহলেও বিষয়টি বেশ উদ্বিগ্নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে উপাচার্যদের সেই বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে বেরিয়ে আসতে চায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
এদিকে, গত মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাকচাপায় হিমেল নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সেই উত্তাল পরিবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এছাড়া এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বেশকিছু দাবিও জানানো হয়েছে। অনেকগুলো দাবি ইতিমধ্যে মেনেও নেওয়া হয়েছে।
পরের দিন সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে নিহত মাহমুদ হাবিব হিমেলের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে হাজার মানুষের ঢল নামে। এসময় হিমেলে জানাযায় উপস্থিত হয়ে ভিসি গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আমি আমার সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়ে কি বা বলতে পারি? পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ কতটা ভারি আপনারা কি সেটা বুঝেন? অথচ তারই কাধে আমার উঠার কথা ছিল।
গেল বছরের আগস্ট ২৯ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সাব্বির দায়িত্বগ্রহণ করেছেন। তিনি বর্তমানে পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালকেরও দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টারও দায়িত্ব পালন করেছেন।
দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে করোনাভাইরাসের বন্ধ থাকায় অল্প সময়ের দায়িত্ব পালনে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে তেমন দৃশ্যমান কোনো কাজ না করতে পারলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কাটিয়ে তোলার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে ৫০ বছরের একাডেমিক মেগা-পরিকল্পনা, গবেষণা ও বিদেশি বিভিন্ন জার্নালে গবেষণা পত্র প্রকাশে বিভিন্ন উদ্যোগসহ ক্যম্পাসে দেশ বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হককে সমাহিত করে স্বরণীয় করে রাখার উদ্যাোগ গ্রহণ করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।
এছাড়া ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদারে বিভিন্ন উদ্যোগ ও শিক্ষার্থীদের প্রতি উদার মানবিকতা বিশেষ করে হিমেলের মৃত্যুর ঘটনায় বর্তমান প্রশাসনের নেওয়া বিভিন্ন পদেক্ষপে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
এবিষয়ে মিজানুর রহমান মিজান নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, হিমেলের মৃত্যুর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বনাম শিক্ষার্থীদের মধ্যে উন্মুক্ত আলোচনা প্রশংসার দাবি রাখে। শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনা করে আসছি, প্রশংসা করার মতো কোন ইস্যু পাইনি, কিন্ত এই উন্মুক্ত আলোচনা ও সিদ্ধান্তগুলো প্রশংসার যোগ্য। ভিসি স্যারকে যথেষ্ট আন্তরিক এবং ছাত্রবান্ধব মনে হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান উল ইসলাম বলেন, একদিনের আলোচনা বা কর্মকাণ্ডই শেষ নয়। আমরা কতটুকু শিক্ষার্থীবান্ধব হচ্ছি, শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে পারছি সেটা আপনারা পরবর্তীতে আরও দেখতে পারবেন। তবে সবার আগে আমরা একটা বিষয় পরিষ্কার করতে চাই, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে দূরত্ব সেটা আমরা সবার আগে কমিয়ে আনার চেষ্টা করবো।