০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪:২২

রাবি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হিমেলের স্বজনদের হাতাহাতি

নিহত হিমেল  © ফাইল ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেলের জানাজা শেষে তার লাশ নাটোরে তার নানাবাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়ার সময় হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। কিন্তু বগুড়ার শেরপুরে হিমেলের দাদার বাড়ির স্বজনেরা এতে আপত্তি জানান। তারা লাশ শেরপুরে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উদ্ধত আচরণ শুরু করেন হিমেলের চাচা ও তার স্বজনরা।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় মসজিদে হিমেলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার লাশ নাটোরে নিয়ে নাটোরের উদ্দেশে রওনা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সহপাঠীরা। হিমেল চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুনঃ ট্রাকচাপায় রাবি শিক্ষার্থী নিহত: ঘাতক চালক আটক

হিমেলের লাশ নাটোর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে পেরে হিমেলের দাদার বাড়ি বগুড়ার শেরপুর থেকে আসা স্বজনেরা এতে আপত্তি জানান। এ নিয়ে তারা হিমেলের বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন।

হিমেলের সহপাঠীরা জানান, যেহেতু হিমেলের বাবা নেই, তাই তার মায়ের কাছেই লাশ পৌঁছানো হবে। তার মা-ই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

অপরদিকে, হিমেলের চাচা মিরাজ জানান, হিমেলের বাবার ইচ্ছা ছিল তার পাশের কবরটি যেন তাদের স্বজনের মধ্যে কারো হয়। আর হিমেল দাদার বাড়িতে বড় হয়েছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ হিমেলের জানাজা পড়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা হিমেলকে শেরপুর নিয়ে যাবো।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক আতাউর রহমান হিমেলের চাচা মিরাজ ও তার স্বজনদেরকে হিমেলের মায়ের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেন।

এরই একপর্যায়ে হিমেলের চাচাত ভাই পরিচয় দেওয়া এক স্বজন শিক্ষার্থীদের সাথে ঔদ্ধতপূর্ণ আচরণ শুরু করে। এতে শিক্ষার্থীরাও উচ্চস্বরে প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে হিমেলের স্বজনেরা শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন ও ধাক্কা দেন। পরে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে অবস্থা বেগতিক দেখে তার স্বজনেরা মাইক্রোযোগে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মাইক্রোটি ভাঙচুরের চেষ্টা চালান। সেখানে উপস্থিত শিক্ষক আতাউর রহমান ও কাজী মামুন হায়দার শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন।

অনুষদের এক শিক্ষার্থী জানান, হিমেলের বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে হিমেল তার নানার বাড়ি নাটোরে মায়ের কাছেই থাকতেন। এতদিন তার চাচারা বা দাদার বাড়ির পক্ষের কেউই হিমেলদের খোঁজ-খবর করেননি। এমনকি হিমেলকে অর্থনৈতিকভাবেও কোনো সহযোগিতা তারা করেননি। হিমেল টিউশনি করে নিজের ও তার মায়ের জন্য কিছু টাকা পাঠাত। হিমেল এ বিষয়গুলো নিয়ে খুব কষ্টে থাকত। আর এখন তারা লাশের দাবি করতে এসেছে।   

উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য দুটি আবাসিক হল ও একটি বিশতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। বিশতলা একাডেমিক ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে শহীদ হবিবুর রহমান হলের দক্ষিণ পাশে। এই ভবনগুলো নির্মাণ করতে বেশ কয়েকটি ট্রাকযোগে নির্মাণসামগ্রী আনা-নেওয়ার কাজ করছে। মঙ্গলবার রাতে শহীদ হবিবুর রহমান হলের দিক থেকে মোটরসাইকেলে ক্যাম্পাসের দিকে যাচ্ছিলেন হিমেল ও রিমেল। এ সময় নির্মাণাধীন বিশতলা একাডেমিক ভবনের গেটের সামনে পৌঁছুলে একটি ট্রাক তাদেরকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই হিমেল মারা যান। আহত হন রিমেল।