০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:৪৫

ঢাবির ফার্মেসি অনুষদে প্রায় ১১ লাখ টাকা আত্মসাৎ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফার্মেসী অনুষদের ব্যাংক হিসেব থেকে প্রায় ১১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিন নির্বাচনের পরপরই নব নির্বাচিত ডিন প্রফেসর সীতেশ চন্দ্র বাছারের কাছে সদ্য সাবেক ডিন প্রফেসর এস এম আব্দুর রহমান দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার সময় বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে এবং পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে এক ধরনের চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে যদিও সাবেক ডিন এস এম আব্দুর রহমান নিজেই উক্ত ঘটনাটি উদঘাটন করেছেন। তারপরও অনুষদে তার দায়িত্ব থাকাকালে এ ঘটনা ঘটার কারণে অনেকে তার দিকেই অভিযোগ তুলছেন। যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। তিনি দাবি করেছেন চেকবইয়ে তার নকল সই বসিয়ে কেউ এ কাজ করেছে।

আরো পড়ুনঃ বাড়তে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি

কে বা কারা, কিভাবে এ ঘটনার সাথে জড়িত ছিল এ ব্যাপারে আদ্যোপান্ত জানতে, ফার্মেসী বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ফিরোজ আহমেদকে আহ্বায়ক করে গত ১০ জানুয়ারি তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ কমিটিতে অন্যান্যরা হলেন, ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের প্রফেসর ড. জাকির আহমেদ চৌধুরী (সদস্য) এবং ক্লিনিক্যাল ফার্মেসী অ্যান্ড ফার্মাকোলজী বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মুহিত (সদস্য সচিব)। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদেরকে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হলেও, প্রায় তিন সপ্তাহ অতিক্রম হতে চললেও তারা তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করতে পারেননি। 

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ব্যাংক শাখায় হিসেবের চেকে ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. এস এম আবদুর রহমানের সাক্ষর ব্যবহার করে অনুষদের ডেভেলপমেন্ট ফান্ড থেকে ৭ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা ও ফার্মেসি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ৩ লক্ষ টাকা (মোট ১০ লক্ষ ৭৬ হাজার) আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এ অর্থ তোলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

আর্থিক লেনদেনের তথ্য বিবরণী বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে দেখা গেছে যে, অনুষদের সদ্য সাবেক ডিন অধ্যাপক আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত আনুমানিক ২০ টি চেকের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে এ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তবে নিয়মিত অডিট না হওয়ার কারণে ঠিক কত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে প্রাথমিকভাবে তার সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে টাকার পরিমাণ আরো বেশি থাকতে পারে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন প্রফেসর এস এম আব্দুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, "যার কাছে চেক বই থাকতো তার মাধ্যমে আমাদের ফ্যাকাল্টির বিভিন্ন প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা উত্তোলন করা হতো এবং একটি লেইজার বুক এ টাকার পরিমাণটা লিখে রেখেই কাজ করা হতো। এই লেইজার বুক এ টাকা উত্তোলনের যে তথ্য গুলো আছে সেগুলোই আসলে সঠিক এবং ওই টাকার চেকেই আমি সই করেছি। আর এর বাইরের কোন চেকে আমি সই করিনি। আর রিসেন্টলি আমি ব্যাংক স্টেটমেন্ট আনতে বললে, চেকবই যার (অনুষদের হিসাব রক্ষক) কাছে থাকে সে বলল যে, স্যার কয়েকটা চেক বই খুঁজে পাচ্ছিনা, চুরি হয়ে গেছে। তারপর আবার সে দেখালো যে এই এই চেক বই থেকে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। এরপরই তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের অনুষদের কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে ব্যাংকে যাই এবং ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে কথা বলে সেগুলোর ব্যাপারে খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করি। তারপর টাকা উত্তোলনের তারিখ অনুযায়ী আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখার চেষ্টা করি, এটা জানার জন্য যে টাকাটা মূলত কে উত্তোলন করল। কিন্তু ওইদিনের কোন ভিডিও ফোটেজ পাওয়া যায়নি। ব্যাপারটি মাননীয় উপাচার্য মহোদয়কে ব্যাপারটি জানালে তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলেন। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং এখনো তদন্ত চলছে, আশা করি প্রতিবেদন পাওয়ার পর সত্য উদঘাটন হবে।"

অবশেষে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, "তদন্ত চলমান এরকম একটা ইস্যুর ব্যাপারে সঠিক তথ্য না জেনেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে নিউজ করিয়ে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আমার দায়িত্ব থাকাকালে আমি নৈতিকতা নিয়ে কাজ করাতে অনেকের স্বার্থে আঘাত লেখেছে এজন্যই হয়তো তারা এরকম করছে। ফার্মেসি অনুষদকে র‍্যাংকিংয়ে নিয়ে আসার পেছনে আমার অবদান সম্পর্কে সবাই কম বেশি জানে। আমার অনুষদে এরকম কোন ঘটনা ঘটুক তা আমি কখনোই চাইবোনা।"

তদন্ত প্রতিবেদনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে, তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও ফার্মেসী বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, "আমাদের তদন্ত কমিটির একজন সদস্য করোনায় আক্রান্ত ছিল। ১৪ বা ১৫ তারিখে উনার কোভিড  পজিটিভ আসে। তারপর থেকে তিনি বেশ কিছুদিন আইসোলেশন এ ছিলেন। তাছাড়াও আমাদের কিছু স্টেটমেন্ট পেতেও দেরি হয়। বিশেষ করে, আমাদের অনুষদের সাবেক ডিনের স্টেটমেন্ট আমরা গত ২৭ তারিখে পেয়েছি। এজন্য আসলে প্রতিবেদন তৈরিতে একটু দেরি হয়ে গেছে। তবে আগামী বুধবারের মধ্যেই আমাদের তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারব বলে আশা করছি। তারপরেই এ ব্যাপারে সবাই বিস্তারিত জানতে পারবেন।"