৩০ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:৫৮

আওয়ামী লীগ সরকার কি জামাতি কাউকে নিয়োগ দেবে: ঢাবি উপাচার্য

অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, দলীয় বিবেচনায় কোন শিক্ষক যখন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ লাভ করবেন তখন তিনি উপাচার্য হয়ে যাবেন৷ নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি তো কোন দলের না। এই ধারণাটাই পোষণ করতে হবে আমাদের৷  এমন ভাবার কোন কারণ আছে কি যে, আওয়ামী লীগ সরকার জামাতি একজন নিয়োগ দেবেন? পৃথিবীর কোথাও কী এটা আছে? ফলে কথাগুলো দায়িত্বশীভাবেই বলতে হবে৷ তিনি যখন নিয়োগ লাভ করবেন তখন তার কাছে সকলেই সমান৷

সম্প্রতি ডয়েচে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন তিনি। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনের পর আবারও দলীয় বিবেচনায় উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি সামনে আসে। 

ডয়েচে ভেলের ওই সাক্ষাতকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আরও বলেন, যখন অন্তবর্তীকালীন অবস্থা তৈরি হয় তখন সরকারকে তথা চ্যান্সেলর হিসেবে রাষ্ট্রপতিকে পদক্ষেপ নিতে হয়৷ তখন তিনি কাউকে নিয়োগ দেন৷ পরে বিশ্ববিদ্যালয়কে যেটা করতে হয়, সেটা সিনেটের মাধ্যমে একটা প্যানেল তৈরি করতে হয়৷ সুতরাং যেটা হয়, সেটা অন্তবর্তীকালীন একটা ব্যবস্থা৷ এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া৷ বিশেষ পরিস্থিতিতে তো উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে৷

আরও পড়ুন- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার সিঁড়ি ঢাবি শিক্ষক সমিতি 

চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগের কোন সুনির্দিষ্ট আইন নেই। যার কারণে নানা ধরনের সংকটের সৃষ্টি হয়৷ এই পরিস্থিতির উত্তরণে স্থায়ী কোন সমাধান আছে কি-না জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, একেবারে কোন আইন নেই সেটা না, সেখানেও আইন আছে৷ বিশ্ববিদ্যালয় যে আইন দ্বারা পরিচালিত হয়, সেই আইনের মধ্যেই উপাচার্য কীভাবে নিয়োগ হবে সেটার কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে৷ সে মোতাবেকই সরকার ব্যবস্থা নেয় এবং রাষ্ট্রপতি উপাচার্য নিয়োগ দেন৷ সবচেয়ে বড় কথা হল, উপাচার্যও তো একজন শিক্ষক৷ প্রথমত তিনি একজন অধ্যাপক৷

তিনি আরও বলেন, উপাচার্যকে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কাজের একটা সমন্বয় করতে হয়৷ কাজের ধরনের মধ্যে উপাচার্যদের কাজ অন্য প্রশাসকদের চেয়ে ভিন্ন৷ এখানে যে প্রশাসন, সেই প্রশাসনে থাকবে একাডেমিক ছোঁয়া৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের  বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ধরনের পদক্ষেপ আছে, অনেক ধরনের পদ আছে যেগুলো আবার অন্যত্র নেই৷ সে কারণেই শিক্ষা ব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসন এই দু’টো সমন্বয় হলো বিশ্ববিদ্যালয়৷

ঢাবি উপাচার্য বলেন, দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পেলে তো সমস্যা হবেই৷ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই চরিত্র নেই৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ লাভ করেন মেধায়৷ ঢালাও ভাবে দায়িত্বহীন কথা বলা যাবে না৷ একজন ভালো ছাত্র, যিনি ভালো ফল করেন তিনিই নিয়োগ লাভ করেন৷ কী বিবেচনায়, সেটির সঙ্গে আমরা পরিচিতও নই৷ এই ধরনের ধারণার সঙ্গে আমার পরিচিতি ঘটার দুর্ভাগ্য হয়নি৷ মেধাবীরাই এখানে নিয়োগ লাভ করেন৷ কখনও কখনও ব্যতিক্রম ঘটেনি সেটা বলাও কঠিন৷

আরও পড়ুন- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে যা বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

রাজনীতি করা শিক্ষককে উপাচার্য করলে লাভ কী- জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, এটি ভিন্ন৷ প্রত্যেক মানুষই রাজনীতিমনস্ক থাকবেন৷ আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটিকে আরো বেশি উৎসাহিত করে থাকি৷ আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলেই রাজনীতিমনস্ক থাকবেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এটি শিক্ষা দেয়৷ আমাদের শিক্ষকেরা মুক্তমনে ভিন্ন ভিন্ন দর্শন-মতামত পোষণ করেন৷ তারা ব্যাখা দেন, বিবৃতি দেন৷ ফলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ৷ যখন তিনি একাডেমিক দায়িত্ব পালন করবেন তখন তিনি নিরপেক্ষ থাকবেন৷ প্রশাসন যখন চালাবেন তখন সেটিও নিরপেক্ষ৷ তবে মূল্যবোধ, ধর্ম দর্শন, সামাজিক দর্শন, রাজনৈতিক দর্শন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে গভীরভাবে থাকবে৷