ডিন হয়েই বদলে যেতে থাকেন অধ্যাপক ফরিদ, অভিযোগ সহকর্মীর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন নির্বাচিত হয়েই অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বদলে যান বলে অভিযোগ করেছেন তার সহকর্মী সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী। আজ মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ অভিযোগ করেন।
স্ট্যাটাসে রুশাদ ফরিদী লিখেন, ভিসি ফরিদ উদ্দীনকে আমি খুব সম্ভবত ২০১৭ সালে ফেসবুকে ব্লক করে দেই। সেই ব্লক এখনো আছে। তখনো তিনি মনে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন, শাহজালালে যান নাই। কিন্তু তখনই ঢাবিতে উনার কর্মকাণ্ড দেখে উনার স্বরূপ আমার বেশ ভালো জানা হয়ে গেছে।
উনাকে আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে চিনি। সেই ১৯৯২ সালে প্রথম বর্ষে উনার পরিসংখ্যান ক্লাস ছিলো। আমার জীবনে যে কয়জন বাজে শিক্ষক রয়েছেন তাদের মধ্যে উনি সম্ভবত উপরের তালিকায় থাকবেন। আসলে উনাকে বাজে শিক্ষক বললে ভুল হবে। উনি কোন শিক্ষকই ছিলেন না। উনি মূলত ছিলেন ব্যবসায়ী। কোন রকম দুই একটা ক্লাস নিয়ে গার্মেন্টস এর ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন । শুনে অবাক হচ্ছেন কিন্তু বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে।
আরও পড়ুন- প্রভোস্ট পদত্যাগের আন্দোলন যেভাবে ভিসি বিরোধী আন্দোলনে রূপ নিলো
এরপর আমি ২০০৮ সালে যখন বিভাগে যোগদান করি শিক্ষক হিসেবে তখন উনি চেয়ারম্যান ছিলেন। তবে এটা স্বীকার করতে হবে যে বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে উনি বিভাগের উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করেছিলেন। ইন ফ্যাক্ট তখন উনার কাজ আর বিভাগের প্রতি ডেডিকেশন দেখে আমি রীতিমতন মুগ্ধ ছিলাম। উনার সাথে বিভাগের উন্নয়নের জন্য প্রচুর কাজ করি। পরে দেখতে পাই এইসব কিছুই তিনি ক্যাপিটালাইজ করেন তার ভবিষ্যত উচ্চাকাংখার জন্য।
এরপর সম্ভবত ২০১১ তে উনি যখন ডীন হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ান আমরা সবাই ভেবেছিলাম উনি একজন যোগ্য ক্যান্ডিডেট। সেই নির্বাচনেও উতরে যান। আর আস্তে আস্তে বদলে যেতে থাকেন। ক্ষমতা আর প্রতিপত্তির লোভে উনার বিবেক আর মনুষ্যত্ব বিকিয়ে দেয়া তখন থেকেই পুরোদমে শুরু হয়ে যায়।
ডীন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সিন্ডিকেট সদস্য সব কিছুই তিনি ঢাবিতে হয়েছেন আর দিনের পর দিন নীতিহীনতার একের পর এক উদাহরণ তৈরি করেছেন আর নিপীড়ক সরকারের দালালি করে গেছেন।
আরও পড়ুন- ২৯ ঘণ্টা পর উপাচার্যের বাসভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ সচল
আমার বিভাগের সবচেয়ে ফাঁকিবাজ আর নীতিহীন শিক্ষকদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। উনার প্রশ্রয়ে দিনের পর দিন বিভাগে একটা কক্ষ পর্যন্ত এই ফাঁকিবাজরা রাখতেন না। গাড়ি থেকে নামতেন ক্লাস নিয়ে আবার গাড়িতে উঠতেন। আর দুই একজন কোন ক্লাসই নিতেন না বছরের পর বছর। বিভাগে প্রথম প্রথম জয়েন করার পর এর অনেক কিছুই বুঝতাম না। তখন উল্টো উনার হয়ে সাফাই গাইতাম। সেইসব বুঝেছি অনেক পরে।
আমার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীদের অনেকের মধ্যে উনার প্রতি অন্ধ আনুগত্য এখনো দেখি। কেউ কেউ উনার ছাত্রদের উপর এই চরম বর্বর আচরণের পক্ষে ত্যানা প্যাঁচানোমূলক বক্তব্য দেয়ার চেষ্টা করেন। উনাদের দেখে বুঝতে পারি এই ফরিদ উদ্দীনরা কিভাবে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদে যায়, যেখানে একটা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক হওয়ারও যোগ্যতা তার নাই।
যাই হোক, এখন যা বুঝতে পারছি তা হলো ফরিদ উদ্দীনের পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়েছে। উনার অশনি সংকেত বেজে উঠেছে। যেরকমই হোক একসময় তো শিক্ষক ছিলেন। সেই দাবি নিয়ে বলছি, স্যার, যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আপনার পদত্যাগের দাবিতে দিনের পর দিন না খেয়ে শীতের কনকনে ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে ধুকেঁ ধুঁকে মরছে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন মুখে আপনি এখনো আছেন? আপনি ওদের সবচেয়ে বড় অভিভাবক। সেই অভিভাবক হয়ে আপনি ওদের উপর পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে নির্যাতন করলেন, সাউন্ড গ্রেনেড মারলেন? ক্ষমতা আর প্রতিপত্তির অন্ধ মোহ থেকে বের হয়ে আসুন । পদত্যাগ করে ফেলুন আজকেই আর এই ছেলেমেয়েগুলোর প্রাণ বাঁচান। প্লীজ।