ঢাবিতে ভর্তির স্বপ্ন পূরণ হল সেতুর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান সেতু আক্তার। কিন্তু পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন তিনি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাইপূর্বক তার ভর্তির জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ।
আজ রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার দিকে সেতু আক্তারের ভর্তির জন্য আর্থিক সহায়তার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকায় ৮৬০তম হন মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার দাশকান্দি এলাকার বয়রা গ্রামের আইয়ুর আলীর মেয়ে সেতু আক্তার। পরে তিন বাংলা বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান। সেতুর বাবা পেশায় দিনমুজর। বাবা, মা ও তিন বোনসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার তাদের। বোনদের মধ্যে সেতু ছোট। বাবা আইয়ুব আলী দিনমুজরের কাজ করে কোনো মতে সংসার চালান। পাশাপাশি সেতুর লেখাপড়ার খরচ বহন করতেন। তার দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।
হরিরামপুর উপজেলার পাটগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে মানবিক বিভাগ থেকে সেতু জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি এবং নরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বাংলা বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান। তবে পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়।
মেধাবী এই ছাত্রীর স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসেন মানিকগঞ্জে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ। তার ভর্তির জন্য আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি ঢাকায় যাতায়াত ভাড়া প্রদান করেন তিনি। এছাড়াও ভবিষ্যতে সেতু আক্তারকে অন্যান্য সহায়তার প্রতিশ্রুতিও দেন জেলা প্রশাসক। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শুক্লা সরকার উপস্থিত ছিলেন।
সেতু আক্তারের বাবা আইয়ুব আলী বলেন, আমি দিনমজুরের কাজ করে কোনো মতে সংসার চালাই। নিজে তো অভাবেব কারণে লেখাপড়া করতে পারিনি। এ কারণে আমার ইচ্ছা মেয়েকে লেখাপড়া করাব। দিনমজুরের কাজ করে প্রতিদিন যে টাকা আয় করতাম এর মধ্যে থেকে মেয়ের লেখাপাড়ার জন্য কিছু টাকা রেখে দিতাম।
তিনি বলেন, মেয়ে এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো রেজাল্টে পাস করে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়বে বলে আমাকে জানায়। অনেক কষ্ট করে সেই পরীক্ষার খরচ জোগার করি। আমার মেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাসও করে। তবে সেখানে ভর্তি হওয়ার মতো টাকা আমার কাছে ছিল না। অবশেষে জেলা প্রশাসক স্যার আমার মেয়ের ভর্তির জন্য আর্থিক সহায়তা করেছেন। আমি খুবই খুশি। এখন আমার মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, জানতে পারি মেয়েটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে তার পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে ভর্তি হতে পারছে না। পরে তার সঙ্গে কথা বলে তার ভর্তির জন্য ২০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।