১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:১৪

৬৪ জেলা ঘুরে ঢাবি ছাত্রের দৃষ্টি এখন বিশ্বভ্রমণে

বায়েজিদ সরকার  © সংগৃহীত

বায়েজিদ সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের ছাত্র। মাত্র ১৩ মাসে ঘুরেছেন দেশের ৬৪ জেলা। তার এই যাত্রা বাগেরহাট থেকে শুরু হয়ে ফেনী ভ্রমণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। বায়েজিদ এখন পুরো বিশ্বকে জয় করতে চান। 

ভ্রমণ থেকে নতুন কিছু শেখার চেষ্ঠা করেন সবসময়। সম্প্রতি দেশ ভ্রমণের গল্প বলেছেন বায়েজিদ।তিনি বলেন, দেশ ঘোরার শুরুটা করোনার মধ্যেই। এর আগে প্রিয় জায়গাগুলোতে ঘোরা হতো। ঘোরাঘুরির ক্ষেত্রে গণপরিবহনই ছিলো আমার বাহন। কখনো বাস, কখনো ট্রেন, কখনো অটো রিকশা বা সিএনজি। ৫ ধাপে আমার ৬৪ জেলা ভ্রমণ শেষ হয়েছে। মাথায় একটা পরিকল্পনা থাকতো যে, এই ১৫ দিনে এই কয়টা জেলায় যাব। গুগল দেখে আর স্থানীয় বন্ধুবান্ধবদের সাথে কথা বলে একটা রোড ম্যাপ করে নিতাম। 

আরও পড়ুন:  বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকতে না দেয়ার বিধান বাতিলের দাবি

দেশের কোন কোন জায়গা বেশি ভাল লেগেছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর লেগেছে বান্দরবান জেলা। তাছাড়া দক্ষিণের দিকে যে দ্বীপগুলো, বিশেষ করে নিঝুম দ্বীপ অনেক সুন্দর। তাছাড়া মনপুরাসহ আরো অনেক এলাকার বিছিন্ন ছোট ছোট দ্বীপ আছে, যা অনেক  বেশি সুন্দর। নিরাপত্তা ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি করা গেলে ঐ এলাকায় ভালো পর্যটন সম্ভবনা রয়েছে। জামালপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত সীমান্ত এলাকাটা সৌন্দর্যের আরেক উদাহরণ। ঐদিকে বর্ডার ঘেষে ভালো রাস্তা হচ্ছে, কাজ চলমান। আশা করা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে ঐদিকেও পর্যটকের আনাগোনা বাড়বে। সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড় বর্ষার সময় যে অপরুপ সৌন্দর্য ধারণ করে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ভারতের কেরালার মতো পর্যটন স্পট তৈরী করা যাবে  আমাদের এখানেও। তবে একটা সমস্যা হচ্ছে নৌকার ভাড়া অনেক বেশি, প্রশাসন কে এই ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। শুধু এখানে না, পুরা বাংলাদেশেই ভ্রমণ খরচ অনেক বেশি। রিসোর্ট গুলোতে বেশি ভাড়া রাখা হয় এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

ভ্রমণে প্রতিকূলতার ব্যাপারে বায়েজিদ বলেন, দেশ ভ্রমণে আমার জন্য প্রতিকূলতা খুব কমই ছিলো। কারণ, আমার পরিবার থেকে সব ধরনের সাপোর্টই ছিলো। টাকা-পয়সা পরিবার থেকেই নিয়েছি। মাঝে-মধ্যে দেখা যেতো বন্ধুরাও ধার দিয়ে সাহায্য করতো। শুরুর দিকে কিছু বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজনের এক রকমের বিরক্তির কারণ বা প্রশ্ন ছিলো, এত ঘুরি কেন! একপর্যায়ে, যখন সবাই বুঝতে পারে এটা আমার শখ, এবং আমি প্রতিনিয়তই ঘোরাঘুরি করছি, তখন ধীরে ধীরে সবাই সাপোর্ট করে। এখন এমনও হয় আমার পরের ভ্রমণটা কোথায় হবে সেটা জানতে অনেকেই আগ্রহী হয়ে থাকে এবং কেউ কেউ ভ্রমণ সঙ্গীও হতে চায়। তবে যখন লকডাউন থাকতো তখন যানবাহন নিয়ে একধরনের প্রতিকূলতা ছিলো।

আরও পড়ুন: নিম্নমানের খাবারে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

ভ্রমণ নিয়ে অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনেক ভালো ঘটনা এবং কিছু খারাপ ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি। খারাপ ঘটনাগুলো অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে। একটা ঘটনা শেয়ার করি, গত বছরের ২ ডিসেম্বর আমরা ৫ জন নেত্রকোণা ঘুরতে যাওয়ার জন্য রওনা হলাম। সোমবার, তাই মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস বন্ধ, এ কারণে হয়তো হাওর এক্সপ্রেসে যাত্রী বেশি ছিলো। আগে থেকে অনলাইন টিকিট কাটবো সেই অবস্থা ছিলো না। কারণ কে যাবে, কে যাবে না সেটা যাওয়ার একদিন পূর্বে নিশ্চিত হয়েছি। রাতে অনলাইন টিকিট আছে কিনা চেক করেছি, কিন্তু পেলাম না। স্টেশনের কাউন্টারও টিকিট দিলো না, বলে সিট নাই। দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট দেয়া হবে না। পরে গেইট দিয়ে ঢুকতে গেলাম, ট্রেনে দাড়িয়ে যাবো এই উদ্দ্যেশে। সবাইকে ঘোরার জন্য নিয়ে গেলাম, রাতের বেলায় কমলাপুর পর্যন্ত গিয়ে তো ফেরত আসা যায় না। আমাদের টিকিট নাই তাই ঢুকতে দেয়া হলো না। পাশেই দালাল ছিলো, আমাদেরকে সে জানালো, ট্রেনে সিটে বসিয়ে দিয়ে আসবে একটা নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে। ঐ পর্যন্ত গিয়ে সততা দেখিয়ে ফিরে আসবো? সবাই আশা করে আছে, ট্যুরে যাবেই। তাই দালালের কথায় রাজি হলাম। কিন্তু টিকিট ছাড়াই আমাদের ঢুকতে দিয়েছে। দালাল গেইটে টাকা দিয়েছে এবং ট্রেনের টিটিকেও টাকা দিয়েছে ।

এরপরই ৩ টা ২০মিনিটে ট্রেন নেত্রকোণা নামিয়ে দিলো আমাদের। একটা মসজিদে বিশ্রাম নেয়ার জন্য গেলাম, কিন্তু তালা লাগানো ছিলো। টুপি পরিহিত একব্যক্তি ট্রেনের টিকিট কাটতে স্টেশনে এসেছে, তাকে জিজ্ঞেস করলাম, মসজিদের চাবির ব্যবস্থা করা যাবে কিনা। যাহোক চাবির ব্যবস্থা হলো না, ঐ লোকটির বাড়ি স্টেশনের কাছেই ছিলো, জোর করে আমাদের তার বাসায় নিয়ে গেলেন। আমরা উনার বাসায় সকাল পর্যন্ত বিশ্রাম করে ঘোরার জন্য রওনা হলাম। তিনি বলে দিয়েছেন, সন্ধ্যায়  শহরে আসলে দেখা করতে। তারপর আমরা সন্ধ্যায়  শহরে এসে নেত্রকোণার বিখ্যাত বালিশ মিষ্টি ও রাতের খাবার খেয়ে স্টেশনে গেলাম। স্টেশনে এসেই তাকে কল দিয়েছি যেহেতু তিনি বলে দিয়েছিলেন। তারপর উনি ৫ মিনিটের মধ্যেই চলে এসেছে স্টেশনে। ট্রেন ছাড়ার সময় রাত ১২ টায়, আর তখন বাজে মাত্র ৮ টা। এদিকে সারাদিন ঘুরে অনেকেই ক্লান্ত। আবারো তার বাসায় নিয়ে গেছেন, তাকে বার বার বিরক্ত করতে চাচ্ছিলাম না, তাই আমরা যেতে আপত্তি করছিলাম। এমন ভালো মানুষও আছে আমাদের দেশে। তার এই আতিথেয়তা আমাদের সারা জীবন মনে থাকবে।  

আরও পড়ুন: ঢাবির ক্যান্টিন মালিককে খাওয়ানো হল পচা মাংস

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বায়েজিদ বলেন, একদিন আমি বিশ্ব দেখব। তবে এ কাজটা ধাপে ধাপে সম্পন্ন করব। এখন আমি ছাত্র, চাইলেই সব কিছু করতে পারবো না। অর্থনৈতিক কিছু ব্যাপারও আছে। পরিবার থেকেও এত সাপোর্ট করতে পারবে না। তবে ইচ্ছা আছে, ছাত্রাবস্থায় আশেপাশের ৩/৪ টা দেশ ভ্রমণ করার। আমি ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট করেছি। এখন আমার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। জানুয়ারি মাসে ভ্রমণ ভিসা যদি চালু থাকে তাহলে দার্জিলিংয়ের ভিসার জন্য আবেদন করবো। এর মাধ্যমেই আমার বিশ্ব ভ্রমণের প্রথম ধাপ শুরু হবে বলে আশা করছি।