ধর্ম কখনও সহিংসতা শেখায় না: অধ্যাপক মাকসুদ কামাল
ধর্ম কখনও সহিংসতা শেখায় না, ধর্মের সম্পর্ক সংহতির সাথে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মডেল ওআইসি ক্লাব আয়োজিত ‘Violence based on Religion: Asian Perspective'’ শীর্ষক এক একাডেমিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
একাডেমিক সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন, বক্তা হিসেব উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদুল ইসলাম। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, সমগ্র এশিয়া জুড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরুত্থান এশিয়ার রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও সরকারগুলোকে এক জায়গায় দাঁড় করানোর জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির পুনর্জাগরণে সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরদার করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষাঙ্গনকে সাম্প্রদায়িকীকরণ রুখে দিতে হবে। অসাম্প্রদায়িক প্রশাসন গড়ে তুলতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান করতে হবে।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ধর্ম সভ্যতা এবং ধর্ম ও মানবিকতা কোনটাই সাংঘর্ষিক নয়। এখন ধর্মের মধ্যে থেকে যা কিছু অনাচার, অবিচার ও নির্যাতন সবকিছুই রাজনৈতিক।
তিনি আরও বলেন, দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান যখন ভাগ হয় তখন বলা হয় ভারত হবে হিন্দুদের রাষ্ট্র আর পাকিস্তান হবে মুসলমানদের রাষ্ট্র। ধর্মভিত্তিক এ বিভাজন একটি দেশের মধ্যে কোনদিন শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। একটি দেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান থাকবে তা তো হওয়ার কথা কিন্তু ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হলে সে দেশ আর শান্তিতে থাকতে পারে না।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল আরো বলেন, ধর্মের কারণে কোন সহিংসতা হয় না। একজন প্রকৃত ধার্মিক কখনও জঙ্গি মনোভাব সম্পন্ন হতে পারে না। একজন ধার্মিক পরধর্মের প্রতি হয় সবসময় সহনশীল।
সমগ্র এশিয়া জুড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরুত্থানে এশিয়ার রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও সরকারগুলোকে এক জায়গায় দাঁড় করানোর জন্য উদ্যোগ নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক মাকসুদ কামাল।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনটি কারণে সহিংসতা হয়। তা হলো শক্তি, প্রভাব এবং আধিপত্য। কোন অঞ্চলে যখন সহিংসতা হয় তখন হয়তো তারা সে অঞ্চলে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর শক্তি প্রয়োগ করতে কিংবা প্রভাব বিস্তার অথবা আধিপত্য বজায় রাখতে এ সহিংসতা করে। এতে কোন ধর্মের যোগসাজশে নেই। তবে এক্ষেত্রে বারবার ধর্মকে পূঁজি করে ব্যবহার করা হয়।
তিনি এক্ষেত্রে মায়ানমার, আফগানিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতাতে কিভাবে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে তা বর্ণনা করেন।
কোন দেশকে সহিংসতা মুক্ত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সে দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যালঘুর ভিত্তিতে মানুষের মাঝে বিভাজন থাকা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন ড. মো. তৌহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, কোন দেশে যখন মানুষকে বিবেচনা করা হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘুর ভিত্তিতে তখন সে দেশ থেকে কখনও সহিংসতা যাবে না। সে দেশে সহিংসতা বহমান থাকবে সবসময়। আমরা যদি সহিংসতা দূরীভূত করতে চাই তাহলে আমাদের এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে হবে বলে উল্লেখ ড. তৌহিদুল ইসলাম।