চাপ-জালিয়াতি সামলাতে দ্বিতীয়বারে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দিচ্ছে না ঢাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দাবি করেছেন ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের এ দাবি সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ঢাবি কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্বিতীয়বার পরীক্ষার সুযোগ থাকলে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে যায়। যার চাপ সামলানোর সামর্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশানের নেই। এছাড়া সেকেন্ড টাইমের কারণে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনাও বেড়ে যায়। তাই দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকীর মেয়াদকালে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে পরীক্ষার কেন্দ্র না করতে চাওয়া, প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দেওয়া, পরীক্ষায় জালিয়াতি রোধ এবং ক্রমবর্ধমান পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণেই মূলত সেসময় দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই তখন দ্বিতীবার ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছিল। ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর চাপ কমানো এবং সরকারে অর্থ অপচয় রোধ করাও সেকেন্ড টাইম না রাখার অন্যতম কারণ ছিল।
ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় ক্রমবর্ধমান শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পাওয়ার সত্যতা মিলেছে বিগত কয়েক শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ছাত্রছাত্রীদের পরিসংখ্যান থেকেও। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে পাঁচটি ইউনিটে ৬ হাজার ১৯৩টি আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ২ লাখ ৯ হাজার ৮৭৭ জন আবেদন করেন। ছয় বছর পর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে আসন বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ১১৮টি। আর ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করেন ২ লাখ ৭২ হাজার ৫১২ জন।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৭ হাজার ১১৮টি আসনের বিপরীতে ভর্তির জন্য আবেদন করেন ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯১ জন। আর সবশেষ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৭ হাজার ১০৩টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৭১২ জন।
ঢাবির বর্তমান নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমবার যারা পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়েছিলো, তারা ভালো বিষয় পাওয়ার আশায় দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিতে আসে। এতে আগের ভর্তি হওয়া সিট খালি হয়ে যায়। যার ফলে সরকারের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়। এছাড়া সেকেন্ড টাইম রাখলে প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত হয়। ক্রমবর্ধমান হারে ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেকেন্ড টাইম না রাখার পক্ষে বর্তমান প্রশাসন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অনেক গবেষণা করে ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। অনেকগুলো যৌক্তিক কারণে সেসময় এটি বন্ধ করা হয়। তাই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনার সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, ঢাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ নেই। আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটিই চূড়ান্ত। যেভাবে চলে আসছে আগামীতেও সেভাবেই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ রাখলে অনেক মেধাবী ছাত্র ঢাবিতে পড়ার সুযোগ পাবেন না- এ ধারণা থেকে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে। পরে ঢাবির এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিচ্ছুরা তখন আন্দোলন করেছিলেন। এছাড়া এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ২৬ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর অভিভাবক আদালতে রিটও করেছিলেন।