ক্যাম্পাসের ‘সাপুড়ে’ তাসিব

রাবির মাদার বখশ হল থেকে সাপ ধরেন তাসিব।
রাবির মাদার বখশ হল থেকে সাপ ধরেন তাসিব।  © সংগৃহীত

ক্যাম্পাসে এক একটা বিকেল যেনো আলাদা হয়ে ধরা দেয় শিক্ষার্থীদের কাছে। তেমনই এক বিকেলে ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন তিনি। এমন সময় বেজে উঠলো তার ফোন। বেগম খালেদা জিয়া হলে একটি সাপ ঢুকে পড়েছে। খবর পাওয়া মাত্র সেখানে ছুটে যায় সে। রুমের জানালা ভেঙে ধরেন সাপ। তারপর ছেড়ে দেন নিরাপদ জায়গায়। বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি)  ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের মিজানুর রহমান তাসিবের কথা। তার সাপ ধরার গল্পগুলা এরকমই। ক্যাম্পাসে অনেকেই তাকে ‘সাপুড়ে তাসিব’ নামে ডাকে।  

তাসিবের ছোটোবেলা থেকেই ছিলো প্রাণিদের প্রতি ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকেই প্রাণি সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন ‘ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্ন্যাক রেসকিউ ফাউন্ডেশন’র সঙ্গে যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি সংগঠনটির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উইং হয়ে কাজ করছেন। 

তার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ছোটোবেলা থেকেই ছিলেন দুরন্ত। সে সময় মুন্সীগঞ্জ, কেরাণীগঞ্জে মাছের চাষ হতো। মাছ ধরার জালে কোনো সাপ উঠলে টেনে হিচড়ে ছাড়ানো হতো। ফলে সাপগুলো আধমরা হয়ে যেতো। সেই সাপ নিয়ে খেলা করতো সে। ভয় লাগার ব্যাপারটা কখনো তার মধ্যে কাজ করতো না।

এসব নিয়ে তিনি বলেন, একদিন সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়ায় ঘুরছিলাম। সে সময় চারটি বাচ্চাসহ একটি মেটো (মাইট্টা) সাপ রাস্তা পার হচ্ছিল। সেগুলো দেখার পর কয়েকজন মিলে সাপগুলোকে পিটিয়ে মারে। সেটা দেখে খুব কষ্ট পাই। তারা তো কোনো অপরাধ করেনি, কারো কোনো ক্ষতিও করেনি। তারপরও তাদেরকে পিটিয়ে মারা হলো। এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম এদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। পরে বিভিন্ন স্ন্যাক রেসকিউ গ্রুপে যুক্ত হই। 

তাসিব বলেন, করোনা মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাপ রেসকিউ করার একটি আন-অফিসিয়াল ট্রেনিং পাই। সেখানে সব ধরনের সাপ ধরার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। 

করোনা মহামারির পর ক্যাম্পাসে হঠাৎ করে সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। সাপ যাতে কেউ না মারে সেজন্য প্রত্যেকটি হলের গেটে একটি লিফলেট লাগিয়ে দেই। সেখানে আমার ফোন নম্বর দিয়ে দেই। এরপর প্রথম ফোন পাই বেগম খালেদা জিয়া হল থেকে। হলের ডাইনিং থেকে ঘরগিন্নী সাপ উদ্ধার করি।

এরপর খালেদা জিয়া হল থেকে আরো একটি, চারুকলা থেকে একটি, মাদার বক্স হল ও তার সামনে থেকে দুটি, জোহা হলে শপিং ব্যাগ থেকে একটি, তাপসী রাবেয়া হল থেকে আরো একটি সাপ উদ্ধার করি। পরে তাদের ক্যাম্পাসের নিরাপদ জায়গায় ছেড়ে দেই।

তাসিন সবার উদ্দেশ্যে বলেন, সাপ মারতে গেলেও রিস্ক থাকে কামড় খাওয়ার। তাই না মেরে আমাকে ফোন দিলে আমি এসে উদ্ধার করবো। ক্যাম্পাসের সবার কাছে আমার অনুরোধ সাপ দেখলে শুধু দূর খেয়াল রাখবেন কোথায় যায়। রেসকিউ করার দায়িত্ব আমার।

দেশে প্রথম সাপের বিষের ডাটাবেজ তৈরি করেছেন রাবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু রেজা। তাসিনের কাজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। দিনদিন সাপের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে যেগুলো আছে সেগুলোও ধ্বংসের দিকে। এদিকে শিক্ষার্থীদের সচেতন হওয়া দরকার। আমরা যদি সাপ না মেরে তাকে সহযোগিতা করি তাহলে ক্যাম্পাসের অনেক সাপ রক্ষা পাবে।


সর্বশেষ সংবাদ