জাবিতে ভর্তিচ্ছুদের সহায়তায় ইফসার ‘মোবাইল স্টল’
মুন্সীগঞ্জ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছেন জাকির হোসেন। কর্তৃপক্ষ মোবাইল না আনার নির্দেশনা দিলেও ভুল করে সব সময়ের সঙ্গী সেই মোবাইল ফোনটি নিয়ে আসে সে। কিন্তু পরীক্ষার হলে তো আর ফোন নিয়ে যাওয়া যাবে না। এদিকে পরীক্ষা শুরুর জন্য হাতে সময় আছে মাত্র ১০ মিনিট। সেই মুহূর্তে পরিচিত কারও কথাও তার মনে আসছে না যার কাছে ফোনটি রাখা যায়।
কী করবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যেই পাশে দেখলেন ইয়ুথ ফর সোশ্যাল এইডের (ইফসা) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার স্টল। সংগঠনটি ভর্তিচ্ছুদের জন্য বিনামূল্যে মোবাইল, ব্যাগ ও অন্যান্য সামগ্রী রাখার ব্যবস্থা করছে। অন্য অনেক শিক্ষার্থীর দেখাদেখি সেখানেই মোবাইল রেখে চিশ্চিন্ত মনে পরীক্ষায় অংশ নেয় জাকির।
পরীক্ষা শেষে মুন্সীগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী জাকির বলেন, আমি তো পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবো কিনা তাই নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু ইফসার এই বুথ দেখার পরে আমার হৃদকম্পন স্বাভাবিক হয়। এখানে ফোন রেখে নিশ্চিন্ত মনে কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দেই। ইফসার ভাইদের ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করা যাবে না।
জাকিরের ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল জাবি স্কুল এন্ড কলেজে। এই কেন্দ্রের বাইরে অবস্থিত ইফসার স্টলে শুধু মোবাইল নয়, পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া যাবে না এমন উপকরণ, যেমন- ঘড়ি, মানিব্যাগ, ব্যাগ ইত্যাদিও যত্ন সহকারে রাখছে সংগঠনটির কর্মীরা।
ইফসার স্টল থেকে সেবা নেয়া আরেক ভর্তিচ্ছু হাসিবুর রহমান বলেন, পরীক্ষার আগে আমার মাত্র ১৫ মিনিট হাতে ছিল। এমন অবস্থায় খুব টেনশনে ছিলাম। কিন্তু ইফসার সদস্যদের জন্য কোনো সমস্যা ছাড়াই পরীক্ষা দিতে পেরেছি। তাদের জন্য অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাই সংগঠনটির কর্মী। ভর্তি পরীক্ষার সময় যখন অনেকেই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সেবা দেয় সেখানে বিনামূল্যে স্বেচ্ছাশ্রমে ইফসার এই কাজ প্রশংসা কুড়িয়েছে পরীক্ষার্থী, অভিভাবক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।
গত ৯ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেই সব পরীক্ষা কেন্দ্র রাখায় শিক্ষার্থীদের লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে জাবিতেই আসতে হচ্ছে।
ফলে যেসব শিক্ষার্থীর পরিচিত কেউ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কিংবা সঙ্গে অভিভাবক থাকেন না, তারা তাদের মোবাইল, মানিব্যাগ সহ অন্যান্য উপকরণ নিয়ে পরেন বিপাকে। মূলত তাদের সাহায্যেই এগিয়ে আসার জন্য ইফসার এই উদ্যোগ।
ভর্তি পরীক্ষার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত জাকিরের মতো প্রায় দুই শতাধিক ভর্তিচ্ছুদের সাথে আনা সামগ্রী রাখার ব্যবস্থা করেছে ইফসার স্বেচ্ছাসেবীরা।
সংগঠনটির সভাপতি আবু তোরাব আতিফ বলেন, প্রতিবছর লাখ লাখ ভর্তিচ্ছু এখানে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসেন। তাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয় সঙ্গে আনা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে। এই ভোগান্তি কমাতে ইফসার সদস্যরা মিলে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
আতিফ জানান, শিক্ষার্থীদের সহায়তায় ইফসার মতো এমন কার্যক্রম ক্যাম্পাসের আরও কিছু সংগঠনকেও করতে দেখা গেছে। তবে তাদের কেউ কেউ এই সেবা দেন অর্থের বিনিময়ে। এই দিক থেকে ইফসার কার্যক্রম নিঃস্বার্থ, ভর্তিচ্ছুদের কল্যাণে নিবেদিত।
সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতার উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১৪ সালের ১২ই এপ্রিল পথচলা শুরু করে ইয়ুথ ফর সোশ্যাল এইড (ইফসা)।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে শীতবস্ত্র ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, ত্রাণ ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ, ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সংগঠনটি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে এর কার্যক্রম।