ঢাবি হলের ক্যান্টিনে খাবারের দাম বাড়লেও কমেছে মান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ক্যান্টিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ক্যান্টিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো  © ফাইল ছবি

মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রায় দেড় বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) খুলেছে। এরপর থেকে বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে আবাসিক হলগুলোর ক্যান্টিনে খাবারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে, খাবারের মান নিয়েও রয়েছে তাদের পাহাড়সম অভিযোগ করছে।

তারা বলছে, হল খোলার পর সব হলের ক্যান্টিনে প্রতিবেলা খাবারের দাম গড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে মাসে প্রায় ১০০০ টাকা বেশি লাগবে একজন শিক্ষার্থীর৷ যা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পক্ষেই এই খরচ বহন প্রায় অসম্ভব। তাই তারা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করছে।

তথ্যমতে, দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার বন্ধ থাকার পর গত ৫ অক্টোবর আবাসিক হলগুলো খুলে দেয়া হয়। একইসাথে খোলা হয়েছে হলগুলোর খাবারের ক্যান্টিনগুলো।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, করোনা মহামারীর মধ্যে ক্যাম্পাসের অনেক পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু বিভিন্ন হলের খাবারের মানে কোন পরিবর্তন হয়নি। করোনার আগে খাবারের যে মান ছিল তা এখন নেই বললেই চলে। শুধু মান কমেছে, তা-ই নয় একইসঙ্গে দামও বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

তাদের এসব অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করতে সরেজমিন কবি জসীমউদ্দীন হল, বিজয় একাত্তর হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, স্যার এ এফ রহমান হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, অমর একুশে হলসহ বেশ কয়েকটি হল ঘুরে দেখা যায়, আগের থেকে প্রতিবেলা খাবারের দাম প্রায় ১০ থেকে ১৫ টাকা করে বেড়েছে।

করোনার আগে বিভিন্ন রকমের মাছ গড়ে সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ টাকা ছিল, যা এখন ৩৫-৪০ টাকা। মুরগির মাংস গড়ে ৩০-৩৫ টাকায় পাওয়া যেত, যার দাম এখন ৪০-৫০ টাকা পর্যন্ত। গরুর মাংস ৪৫-৫০ টাকা থেকে বেড়ে এখন হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা। শুধু মাছ-গোশত নয় এমন কোন খাবার নেই যার দাম বাড়েনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জসীমউদ্দীন হলের এক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বর্তমানে খাবারের যে দাম বাড়ানো হয়েছে তা আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের পক্ষে খুব কষ্টকর হয়ে গেছে। নতুন করে হল খোলার পরে ক্যান্টিনের খাবারের দাম তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ৩০ টাকার খাবার এখন ৩৫ টাকা, ৪০ টাকার খাবার ৫০ টাকা হয়ে গিয়েছে। শুধু যে দাম বেড়েছে তাই নয় খাবারের মান আগের থেকে অনেক নিম্নমানের হয়েছে।

বিজয় একাত্তর হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, দীর্ঘ সময় লকডাউনের কারণে আমাদের অনেকেরই পারিবারিক অবস্থা নাজুক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকের টিউশনি ছিল সেটাও চলে গেছে। ফলে এই নিত্যদিনের খাবারের মূল্যবৃদ্ধি আমাদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

খাবারের মান কমে যাওয়ায় পুষ্টিহীনতায় ভোগার কথা জানিয়ে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আল মামুন বলেন, আগে যে তিন হাজার টাকা হলে পুরো মাসের খাবার হয়ে যেত আর এখন সেখানে চার হাজার টাকার উপরে লাগছে। ফলে পেটপুরে খাবার তো খেতেই পারছি না উপরন্তু মানহীন খাবারের কারণে পুষ্টিহীনতায় ভুগছি।

কয়েকজন ক্যান্টিন মালিকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা বলেন, বাজারের প্রায় সব দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে। যার কারণে তারা বাধ্য হয়েছেন খাবারের দাম বাড়াতে। তবে খাবারের মান কমে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারেননি তারা।

জানতে চাইলে ঢাবির প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ও বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বলেন, হলের ক্যান্টিনের খাবারের দাম নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। খাবারের দাম বাড়ানো হয়নি। যদি দাম বাড়িয়ে থাকে তাহলে কেন বাড়ালো সে জন্য দায়িত্বরত শিক্ষকদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ