গর্বিত বাবা, তিন মেয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

তিন শিক্ষক বোন
তিন শিক্ষক বোন  © ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে শিক্ষক আহমদ কবিরের পরিবার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, তার স্ত্রী নিলুফার বেগম ঢাকা সিটি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। আর তিন মেয়ে, উপমা কবির, শৈলী কবির ও মিত্রা কবির, তিনজনই এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে পড়ান। এক কথায় শিক্ষক পরিবার।

উপমা কবির  বলেন, দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাবিদদের খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে সেই ছেলেবেলায়। তাদের দেখে তাদের মতো হওয়ার একটা আগ্রহ জাগত। তাই হয়তো আমাদের তিন বোনেরই শিক্ষকতায় আসা। 

আরেক বোন মিত্রা কবির বলেন, ছোটবেলা থেকেই গণিত বা পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি আমার মনোযোগ অনেক বেশি। তিনি ছায়ানটের শিল্পীও ছিলেন। ২০০৪ সালে স্টার সার্চ প্রতিযোগিতাতেও পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।

তিন বোনই মেডিকেল বা বুয়েটে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুযোগ ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। উপমা কবির বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়টা অনেক বড়, এখানে মনটাও বড় হয়ে যায়। আমার কাছে মনে হয়েছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আরও ঔদার্যভরা একটা দৃষ্টিভঙ্গি পাব।’ সঙ্গে শৈলী কবির যোগ করলেন, ‘মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট পাই। কম্পিউটার সায়েন্সে চান্স পেয়েছি দেখে ঢাবিতে চলে আসি; কারণ, মনে হয়েছে এটাই আমার আপন জায়গা।’

একই বিভাগে পড়ালেও অবশ্য তারা একসঙ্গে কাজ করতে পেরেছেন খুবই কম। উচ্চতর শিক্ষার জন্য কেউ না কেউ দেশের বাইরে ছিলেন। তবে মিত্রা কবির বললেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের দিনের এক বিরল ঘটনার কথা। বাবা, তিন বোন এবং দুজনের স্বামী—একসঙ্গে ৬ জন শিক্ষক হিসেবে ভোট দিতে গিয়েছিলেন। দিনটি তাদের জন্য সত্যিই অন্য রকম গর্বের ছিল।

শিক্ষক পরিবারের পরের প্রজন্মও কি একই পথে হাঁটার স্বপ্ন দেখছে? শৈলী কবির বলেন, ‘শিক্ষক হওয়া সহজ নয়। একটা জাতিকে গড়ে তোলার দায়িত্ব থাকে শিক্ষকতায়। আমি অবশ্যই চাই এমন সম্মানের একটা জায়গা তাঁরা নিজেদের জন্য গড়ে তুলুক, নিজ নিজ যোগ্যতায়।’

তিন শিক্ষকের সঙ্গে আলাপে বারবার ঘুরেফিরে আসছিল মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা। তারা মনে করেন, তাদের বেড়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল—নিজের মতো করে মানুষ হওয়ার স্বাধীনতা। উপমা কবির বলেন, ‘সব মা–বাবাই সন্তানকে ভালোবাসেন, কিন্তু খুব কম মা-বাবাই সন্তানের বন্ধু হতে পারেন। আমাদের মা-বাবা সেটা পেরেছিলেন।’