ঢাবি ভর্তিচ্ছুদের আগাম প্রশ্ন দেয়ার প্রলোভন ফেসবুকে
আগামী শুক্রবার (১ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কষ্ট কমাতে এবার ঢাকাসহ দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের ৮ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ পরীক্ষার কেন্দ্র থাকবে।
‘ক’ এবং ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষাকে সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একাধিক সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। তারা বিভিন্ন ফেইক ও ছদ্মনাম ব্যবহার করে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করছেন। ‘ক’ এবং ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তাদের কাছে রয়েছে দাবি করে জানান, ‘নো এডভান্স, নো কোয়েশ্চন’ অর্থাৎ আগে টাকা দিতে হবে, তারপর প্রশ্নপত্র পাবে। সেক্ষেত্রে নগদ কিংবা বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে হবে।
তবে প্রশ্নফাঁসের কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়েছে। বলছে, পরীক্ষা ঘিরে যেসব নিরাপত্তা নেওয়া দরকার সেগুলো এরইমধ্যে সম্পন্ন করেছে প্রশাসন। কোথাও কোনো প্রশ্নফাঁস কিংবা জালিয়াতির সুযোগ নেই। আমরা সব জায়গায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ আমাদের সব ধরনের নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চিত করেছে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের এসব বিষয়গুলোতে সতর্ক হওয়ার আহবান জানাচ্ছি, তারা যেন বিভ্রান্ত না হয়। ভর্তি পরীক্ষায় যে কোনো জালিয়াতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আসলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ হলে তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিস্কার করা হয়েছে। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে জীবনের যে কোন পর্যায়ে জালিয়াতি ধরা পড়লে ছাত্রত্ব/সনদ বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের জালিয়াতি ও প্রতারণা এড়াতে ‘জিরো টলারেন্স’ (শূন্য সহিষ্ণুতা) নীতি ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, যেকোনো অসাধু তৎপরতা রুখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক আছে। যখন যেখানেই এসব চিহ্নিত হবে, যৌথভাবে তৎপর থেকে আমরা মোকাবিলা করব। ভর্তি পরীক্ষা সামনে রেখে আজ বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চ্যুয়াল শ্রেণিকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য এসব কথা বলেন।
ফেসবুকে এমন একটি প্রতারক চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে এক ভর্তিচ্ছুর। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ক’ ইউনিটের প্রশ্নপত্রের অরজিনাল পেপার তাদের কাছে রয়েছে, শতভাগ কমন পড়বে দাবি করে চক্রটি আগে টাকা দাবি করে। সেজন্য একটি নগদ নাম্বার (০১৯৯৭....০০৭) দিয়ে এডভান্স ২৫ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। মোট ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। পরে টাকা না পাঠালে আমাকে ব্লক করে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ভর্তিচ্ছুদের টার্গেট করে যোগাযোগ করছে এসব প্রতারক চক্র। বিষয়টি আগেই জানতে পেরেছি তাই টাকা পাঠায়নি। তারা আগে টাকা নিয়ে পরে মেসেঞ্জার থেকে ব্লক করে দেয়। এরকম অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়েছে শুনেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ভর্তিচ্ছু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, মেসেঞ্জারে প্রশ্নপত্র বিক্রি হচ্ছে শুনেছি। এটা যদি সত্যি হয় তাহলে যারা কষ্ট করে প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের যথাযথ মূল্যায়ন হবে না। আর যদি প্রতারণা হয় তাহলে ভর্তিচ্ছুরা ঠকবে। তাই এই বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ঢাবি উপাচার্য আরও বলেন, যেকোনো ধরনের অসদুপায় ও ডিজিটাল জালিয়াতি মূলোৎপাটনে আমরা কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি। যাঁরা ডিজিটাল জালিয়াতির চক্র, মূল হোতা হিসেবে ভর্তি পরীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেন, তাঁদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে।
“জালিয়াতির মাধ্যমে যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন, তাদের আমরা শনাক্ত করেছি। ভর্তি বাতিলসহ বহিষ্কার করে তাঁদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা ছিল। এবারের ভর্তি পরীক্ষায়ও যখন যেখানেই চিহ্নিত হবে, বিশ্ববিদ্যালয় খুব কঠিন অবস্থানে থাকবে। জালিয়াতি প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো টলারেন্স থাকবে। যেকোনো অসাধু তৎপরতা রুখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক আছে। যৌথভাবে তৎপর থেকে আমরা মোকাবিলা করব।”
প্রসঙ্গত, আগামী শুক্রবার ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। এর একদিন পর শনিবার (২ অক্টেচাবর) ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তাছাড়া ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ২২ অক্টোবর, ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ২৩ অক্টোবর এবং ‘চ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা (সাধারণ জ্ঞান) ৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে।