গবেষণা প্রতিবেদন

৩ মিনিটেই চিকিৎসা শেষ জাবির মেডিক্যালে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের সেবা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রোগীরা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের সেবা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রোগীরা  © টিডিসি ফটো

রোগ নির্ণয়ের (ডায়াগনোসিস) জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) চিকিৎসা কেন্দ্রের ৭১ শতাংশ সেবাগ্রহীতা নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে ৯৪.৫ শতাংশ রোগী ডাক্তারদের সুপারিশকৃত ওষুধের অপর্যাপ্ততা নিয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রতি ক্ষুদ্ধ। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৮০ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবার জন্য এই প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল। অথচ এখানে আসা ৬২.৫ শতাংশ মানুষকে মাত্র তিন মিনিটের মধ্যেই চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। যাদের মধ্যে ৫২.৫ শতাংশ চিকিৎসার মান নিয়ে অসন্তোষ হলেও এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে অনাগ্রহী।

‘প্যাশেন্টস স্যাটিসফ্যাকশন এট মেডিক্যাল সেন্টার অব জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি’ শিরোনামের গবেষণাটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগ নৈতিক অনুমোদন করে। বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের অনুমতি নিয়ে গবেষণাটি সম্পন্ন হয়।

পড়ুন: শুধু নামেই আধুনিক মেডিকেল সেন্টার, সেবার মান নাজুক

গত জুলাই মাসে গবেষণাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের জার্নাল ‘জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি এনভায়োরেনমেন্টাল বুলেটিন’ এর সপ্তম ভলিউমে প্রকাশিত হয়। গবেষণায় চিকিৎসা কেন্দ্রের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধাকে সেবা প্রদানের জন্য অপর্যাপ্ত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা সেবার মান মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে এই গবেষণা পরিচালনা করেন পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের প্রভাষক মাহমুদুর রহমান, শিক্ষার্থী রুম্পা সরকার, ওয়াহিদুজ্জামান সোজু, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নন্দিতা সরকার এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী নবনিতা সরকার।

গবেষক মাহমুদুর রহমান বলেন, ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত ২০০ জন সেবাগ্রহীতার সাক্ষাতকার নেওয়া হয়। তাদেরকে শারীরিক সুযোগ সুবিধা, স্বাস্থ্যবিধি, অপেক্ষমান সময়, চিকিৎসার মান এবং রোগীর সেবা সংক্রান্ত পাচটি বিষয়ে নির্ধারিত প্রশ্ন করা হয়। এদের ৬৩ শতাংশ পুরুষ ও ২৮ শতাংশ নারী এবং যাদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, আমাদের জরিপে অংশগ্রহণকারী ২০০ জনের অধিকাংশই ১৮ থেকে ২৮ বছর বয়সী। এছাড়া উত্তরদাতাদের ৬২ শতাংশ মানুষ অবিবাহিত এবং ২৮ শতাংশ বিবাহিত ছিলেন।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, মেডিক্যাল সেন্টারের সার্বিক পরিচ্ছন্নতাকে ৬৮.৫ শতাংশ ভালো বললেও ৪৩.৫ শতাংশ মানুষ শৌচাগারকে বাজে বলে মন্তব্য করেছেন। এখানকার নিরাপদ পানি ও ওয়াশরুম ব্যবস্থাপনা নিয়ে ৮৫.৫ শতাংশ অসন্তুষ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া বসার স্থান নিয়ে ৮৬.৫ শতাংশ রোগী মেডিক্যাল সেন্টারে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যদিও অপেক্ষমান সময় নিয়ে ৬৭ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট।

গবেষণায় বলা হয়েছে, জরিপে অংশগ্রহণকারী উত্তরদাতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা তাদের সন্তুষ্টির মাত্রাকে প্রভাবিত করেছে।

সহযোগী অধ্যাপক নন্দিতা সরকার বলেন, ‘আমরা একটি কমিউনিটির প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রের ওপর রোগীর প্রেক্ষাপটে গবেষণা করেছি। সেখানে রোগীর বিভিন্ন বিষয়ে সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির বিষয়গুলো উঠে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘সেবা গ্রহণকারীরা এখানে আসে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য। যার কারণে কাগজে কলমে সেবার মান অবনমিত হলেও বাস্তবে পরিস্থিতি ভিন্ন। যেমন, চিকিৎসা সেবার ব্যাপ্তি মাত্র তিন মিনিট এসেছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে বাস্তবতা এরকম। যদিও অনেকেই এটা বুঝতে চায় না। বিশ্ববিদ্যালয় কমিউনিটির অনেকেই ধারণা রাখে এখান থেকেই সকল স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাবে। যেটি অপ্রত্যাশিত।’

তিনি বলেন, রোগ নির্ণয়ের জন্য এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে টেকনিক্যাল সাপোর্ট নেই। যার কারণে অসন্তুষ্টির মাত্রা বেশি।

গবেষক মাহমুদুর রহমান বলেন, উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল সেন্টার সমূহ পূর্ণাঙ্গ হয়ে থাকে। এমনকি মেডিকেল ফ্যাকাল্টি থাকে। যেটি জাহাঙ্গীরনগরে হয়নি। এক্ষেত্রে আমাদের গবেষণার আরো বিষয় রয়েছে। এর পরে এ ব্যাপারে সুপারিশ করা হবে। তবে এ মূহুর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় কমিউনিটির জন্য একটি ইমার্জেন্সি সার্ভিস এখানে থাকা উচিত। এছাড়াও কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ