স্মৃতিসৌধে অনিয়মের প্রতিবাদ, জাবি শিক্ষার্থীকে পেটালেন আনসার সদস্যরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঘুরতে গিয়ে আনসার সদস্যদের দ্বারা বেধড়ক মারধরের শিকার হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নূর হোসাইন।

সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) আনুমানিক ২ টার সময় সাভার নবীগরে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে এ ঘটনা ঘটে।

চট্গ্রাম থেকে আসা দু’জন ভাগ্নেকে নিয়ে আজ দুপুরের দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঘুরতে যান নূর। দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ বলে তাদেরকে ঢুকতে না দিলেও ভিতরে অনেককে দেখতে পেয়ে টাকা নিয়ে ভিতরে প্রবেশের প্রতিবাদ করেন নূর।

এ সময় ভিতরে থাকা দর্শনার্থীদের ভিডিও করতে গেলে আনসার সদস্যরা তাকে স্মৃতিসৌধের ভিতরে একটি কক্ষে আবদ্ধ রেখে অত্যন্ত নারকীয় কায়দায় শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মকভাবে আঘাত করে। এরইমধ্যে নূরের বড় ভাগ্নে ৯৯৯ এ ফোন করলে নিকটস্থ থানা থেকে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে নিউরোসায়েন্স ইন্সটিটিউটে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নূর হোসাইনের বরাত দিয়ে তার বন্ধু জহির ফয়সাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওর দু’জন ভাগিনা চট্টগ্রাম থেকে এসেছে স্মৃতিসৌধ দেখার জন্য। আজ তাদেরকে নিয়ে স্মৃতিসৌধে নিয়ে যায়। সেখানে সিকিউরিটি গার্ড কিছুসংখ্যক কাপলকে টাকার বিনিময়ে প্রবেশ করতে দিলেও তাদের প্রবেশ করতে দেয়নি। ও এর প্রতিবাদ করায় তর্ক বিতর্ক শুরু হয়। পরে সে টাকার বিনিময়ে ভিতরে প্রবেশ করা দর্শনার্থীদের ভিডিও করতে গেলে একজন আনসার সদস্য এসে বলে ওরা ভিডিও করতেছে। পরে ৭-৮ জন আনসার সদস্য তাকে ভিতরে নিয়ে অত্যন্ত নারকীয় কায়দায় মারধর করে।’

‘প্রথমে একটি রুমে আবদ্ধ রেখে ৭-৮ জন আনসার সদস্য মিলে ঠোঁট, গলা, ও তলপেটে মারাত্মকভাবে আঘাত করে। পরে মাথাতেও মারাত্মক আঘাত করে এবং ব্যবহৃত লাঠি দিয়ে পা থেতলিয়ে দিয়েছে।’

তার ভাগ্নেরা বাইরে থেকে মারধরের শব্দ শুনে ভিতরে যেতে চাইলেও প্রবেশ করতে দেয়নি। পরে ওর বড় ভাগ্নে ট্রিপল নাইনে (৯৯৯) ফোন করলে প্রায় ২০ মিনিট পর ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। পুলিশ কর্মকর্তা প্রহারকারীদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা কথা না বলে নির্যাতন চালিয়ে যেতে থাকে। পরে ওখানে দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে বলে জহির ফয়সাল জানান।

এ বিষয়ে স্মৃতিসৌধে দায়িত্বরত গণপূর্ত অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি ঘটনার সময় লাঞ্চের জন্য বাড়িতে ছিলাম। ঘটনার পর অফিসে এসে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। ট্রিপল নাইন এ ফোন করার কারণে পুলিশ ও এসেছিল। পরে তার চিকিৎসার জন্য সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।’

ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আমার এক কর্মচারীর মাধ্যমে যতটুকু জানতে পেরেছি যে, ওনারা তিন জন এখানে বেড়াতে এসেছেন। কিন্তু আমাদের ছুটি থাকায় আনসার সদস্যরা ভিতরে প্রবেশ করতে দেন নাই। ভিতরে কিছু লোক ছিল। তখন উনি (নূর) আনসার সদস্যদের কাছে ভিতরে অন্যান্য লোক থাকলে তাদেরকে কেন ঢুকতে দেওয়া হবে না তা জানতে চান। এরই মধ্যে উনি ভিডিও করতে চাইলে আনসার সদস্যরা তার মোবাইল কেড়ে নিতে যায়। বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে অ্যাসল্টের ঘটনা ঘটে।

ঘটনার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আসলে লো মানুষের (আনসার সদস্যদের) মাথায় তো সমান বুদ্ধি থাকে না। তাই এমন ঘটনা ঘটেছে।’

এ ঘটনায় কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আনসারের থানা অফিসারকে ডেকেছি। তার সাথে আলোচনার পর কিছু একটা হবে।’

তবে ৯৯৯ এ অভিযোগ করার পর ঘটনাস্থল থেকে নূরকে উদ্ধারকারী আশুলিয়া থানার এসআই হাসিব শিকদার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসার জন্য এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভিকটিমের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেবো।’


সর্বশেষ সংবাদ