গা ঘেঁষে ফি দিয়ে ফাঁকে বসে পরীক্ষা দিতে রাজি নয় রাবি শিক্ষার্থীরা

রাবি শিক্ষার্থী
রাবি শিক্ষার্থী  © টিডিসি ছবি

করোনায় আটকে থাকা পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ফরম পূরণ কার্যক্রম শুরু করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ। তবে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে গিয়ে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গিয়ে এমন ভোগান্তির শিকার হন তারা।

এসময় শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংকের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও টাকা জমা দিতে না পারায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করার পাশাপাশি এসব কার্যক্রম অনলাইনের আওতায় আনার দাবি জানান ভুক্তভোগী এই শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কার্যক্রমে ক্ষোভ প্রকাশ জাহিদ ইমাম শুভ নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, 'দেশের প্রথম ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরেও কেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লাগে? ডিপার্টমেন্ট টু ব্যাংক, ব্যাংক টু হল, হল টু ডিপার্টমেন্ট কেন দিনের পর দিন নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরা লাগে এর উত্তর চাই।'

তিনি আরও লিখেছেন, 'মুখে মুখে কত ডিজিটাল ডিজিটাল বলে লাফাই আমরা। অথচ কাজের বেলায় গিয়ে এর কিছুই পাইনা। মানুষের বিবেক বলে কিছু থাকা দরকার! এ ভোগান্তির শেষ কোথায়?'

এমন কার্যক্রমের সমালোচনা করে বাদশা আলম নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, 'সব থেকে সেকেলে সিস্টেমে এখনও চলছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। কে বলেছে এটা ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়? ওনাদের মেইন উদ্দেশ্য টাকা নেয়া। সেটা ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমে নিতে পারে। এর জন্য বিভাগ, হল, ব্যাংকে দৌড়, এসবের কোন মানে হয় না'।

এছাড়াও করোনার বিরূপ পরিস্থিতিতে কোন স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এভাবে গা ঘেঁষে ফি দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় দিনের পর দৌড়াদৌড়ির তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে গা ঘেঁষে ফি পরিশোধ করে ফাঁকে বসে পরীক্ষা দেয়া কতটা যৌক্তিক প্রশাসনের নিকট এমন প্রশ্ন তুলে সমালোচনা করার পাশাপাশি এগুলো অনলাইনে কার্যক্রমের আওতায় আনার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক তারেক নূর জানান, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়টা আমরা পর্যবেক্ষণ করে সেবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। আসলে সবগুলো বিভাগ একসাথে তারিখ ঘোষণার ফলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি।

খুব শীঘ্রই অনলাইন কার্যক্রম শুরু আশ্বাস দিয়ে তিনি জানান, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের সাথে এবিষয়ে কথা বলেছি। আশা করছি খুব শীগ্রই এসব কার্যক্রম অনলাইনের আওতায় আনা হবে।

এ বিষয়ে আইসিটি সেন্টারে পরিচালক অধ্যাপক বাবুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের বিষয়টি নিয়ে প্রথমিক আলোচনা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি এপুরো বিষয়টি অনলাইনে আওতায় নিয়ে আসার। এটা খুব দ্রুতই হবে বলে জানান এই পরিচালক।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম জানান, সমস্যা তৈরী হয়, সমাধানের জন্যই। সুতরাং আমরা সে বিষয়ে সমাধান দিতে কাজ করছি। সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়টা আমরা অবগত হয়েছি, ফলে সেখানে বুথ বাড়ানোর ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়া পরবর্তীতে যাতে শিক্ষার্থীদের আর কষ্ট করে লাইনেই দাঁড়াতে না হয়, সেজন্য অনলাইন সিস্টেম চালুর ব্যবস্থা করা হবে।

সোনালী ব্যাংক বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো চুক্তির বিষয়, যা সোনালী ব্যাংকের সাথে এখন হয়নি। তাছাড়া ব্যাংকটা সবেমাত্র শুরু হলো। পরবর্তী প্রশাসনিক আলোচনায় বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার জানান, আমরা ইতোমধ্যে এ সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করেছি। এ পুরো প্রক্রিয়াটা অনলাইনের আওতায় আনার জন্য আইসিটি সেন্টারে নির্দেশ দিয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।

এর আগে, গত ২৭ আগস্ট করোনায় আটকে থাকা পরীক্ষাগুলো নেয়ার ঘোষণা দেয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সেই ধারাবাহিকতায় পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ।


সর্বশেষ সংবাদ