০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:৪৮

পরীক্ষা শুরুর ২ মিনিট আগেও লোকাল বাসে চবি শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অধিকাংশ বিভাগের পরীক্ষা  সশরীরে শুরু হয়েছে। তবে সেই সব পরীক্ষায় অংশ নিতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে চবি শিক্ষার্থীদের। শাটল ট্রেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বন্ধ থাকায় ক্যাম্পাসে এসে যথাসময়ে পরীক্ষায় বসতে পারছে না অনেক শিক্ষার্থী। 

অথচ শিক্ষকদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চালু থাকলেও শিক্ষার্থীদের দূর-দূরান্ত থেকে আসতে হচ্ছে গণপরিবহনে। এদিকে আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে হলে অবস্থান করাটাও অসম্ভব। যার ফলে অনেকেই থাকছেন শহরে কিংবা ক্যাম্পাসের আশপাশের কটেজগুলোতে। এতে ক্রমেই বাড়ছে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি।  

বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়ার কথা চবির ফিন্যান্স বিভাগের ২য় বর্ষের অ্যাকাউন্টিং পরীক্ষা। নগরের মুরাদপুর থেকে সকাল ৯টায় লোকাল বাসে চড়ে ক্যাম্পাসে রওয়ানা হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। যাদের কেউ পরীক্ষার্থী, আবার কেউ পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে যাচ্ছেন ক্যাম্পাসে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কে রাস্তার কাজ চলায় যানজট বেড়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে যাতায়াতে। অপরদিকে অধিকাংশ বিভাগের পরীক্ষা সকাল ১০টায় হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে সময়মতো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করাটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। কেউ পরীক্ষার আগের রাতে ক্যাম্পাসের আশপাশের কোনও কটেজে গিয়ে থাকছে। আবার কেউ নিরুপায় হয়ে পরীক্ষার দিন ঝুঁকি নিয়ে রওয়ানা হচ্ছে পরীক্ষা দিতে।

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান বলেন, আমার সামনের সিটে বসা ফিন্যান্স বিভাগের একজন পরীক্ষার্থী বলছিলেন, তার পরীক্ষা শুরু হতে আর মাত্র দুই মিনিট বাকি। তখনও সে জানে না, ক্যাম্পাসে কখন পৌঁছাবে, আর কখন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে? সকাল ৯টায় রওয়ানা দিয়েও সাড়ে ১০টার আগে ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেননি তিনি। তাছাড়া ক্যাম্পাসে আসার পর পরীক্ষার হল পর্যন্ত যেতে আরও কমপক্ষে ২০ মিনিট সময় লাগবে তার। ক্যাম্পাস বড় হওয়ায় অনেক বিভাগে যেতে আরও বেশি সময়ও লাগে। তার মানসিক অবস্থা তখন কেমন ছিলো, সেটাই ভাবছিলাম।

নাহিদ হাসান বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যেও পরীক্ষায় অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের এত সমস্যা হচ্ছে। অথচ কয়েকদিনের মধ্যেই আমাদের বিভাগের পরীক্ষা শুরু হবে। আমাদের পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে আরও আধঘণ্টা আগে। আমরা জানি না, সকাল ১০টার মধ্যে শহর থেকে কিভাবে ক্যাম্পাসে গিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবো? এ বিষয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হলেও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না।  
 
নাহিদ হাসান বলেন, পরীক্ষার ফরমের টাকা জমা দিতে এ সপ্তাহে অন্তত তিনবার শহর থেকে ক্যাম্পাসে এসেছি। প্রতিবারই সারাদিন ঘুরে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। আজও টাকা জমা নেওয়া হয়নি। অথচ পরীক্ষার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এমনিতেই হঠাৎ পরীক্ষার রুটিন দেওয়ায় আমরা প্রস্তুতির সময় কম পাচ্ছি। তার ওপর ফরম পূরণ ও টাকা জমা দেওয়ার জটিলতায় প্রায় প্রতিদিন ক্যাম্পাসে আসতে হচ্ছে। সবকিছুতে ডিজিটালাইজেশন হলেও আমাদের দাফতরিক কার্যক্রমগুলো এখনও পুরাতন নিয়মে হচ্ছে। ফলে পড়াশোনার চেয়েও আমাদের কাছে অনেক জটিল হয়ে উঠেছে চবির অ্যানালগ সিস্টেমে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া।

চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা সবার আগে কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিৎ। শাটল ট্রেন চালু করা সম্ভব না হলেও পরীক্ষার সময়টা এমনভাবে দিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের আসতে সমস্যা না হয়। একজন শিক্ষার্থী যদি বন্দর, পটিয়া বা রাউজান থেকে রওয়ানা হয়, সে কিভাবে সকাল ১০টার মধ্যে ক্যাম্পাসে আসবে? 

তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ করবো, পরীক্ষার্থীদের জন্য হলেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে তাদের আসতে দেরি না হয়। অন্যথায় আমরা গতানুগতিক উপায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।