০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০১

সেপ্টেম্বরেই হল-ক্যাম্পাস খোলার দাবি ঢাবির ১৩টি ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

চলতি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পরিবেশ পরিষদের’ অন্তর্ভুক্ত ১৩টি ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের নেতারা। মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তারা এ দাবি জানান।

এছাড়া সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী এবং বিভিন্ন হলের প্রভোস্টসহ মোট ৬৯ জন যুক্ত ছিলেন। এতে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ ১৩টি ছাত্রসংগঠনের ২১ জন ছাত্রনেতা অংশ নিয়েছিলেন। 

সভায় ছাত্রলীগসহ উপস্থিত সকল ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবি জানিয়েছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে তা শতভাগ বাস্তবায়নের জোর দাবি জানিয়েছেন ছাত্র সংগঠনগুলো। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে অ্যাসাইনমেন্ট ও পরীক্ষার মাঝে সামঞ্জস্যতা বিধান ও হলগুলোতে মেডিকেল সেন্টার উদ্ভোধনের আহবানও জানান ছাত্রনেতারা।

ছাত্রনেতাদের এ দাবির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটি একটি মিটিং করে পরবর্তীতে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে সভায় জানানো হয়।

সভার বিষয়ে জানতে চাইলে স্যার এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, সভায় ছাত্রনেতৃবৃন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কর্মসূচি আছে এ ব্যাপারে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেন হল খুলে দেয়া হয় সব ছাত্রসংগঠন এ দাবি তুলেছে। মাননীয় উপাচার্য বলেছেন যে, ১৫ সেপ্টেম্বর প্রভোস্ট কমিটির ও ১৬ সেপ্টেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং রয়েছে। মিটিংগুলো করে আমরা একটি তারিখ জানাতে পারবো।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি এবং প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয় সেটি আমরা বলেছি।

“প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সময়সূচি যেন এগিয়ে নিয়ে আসা হয় এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেন হলগুলো স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে খুলে দেয়া হয় এবং একাডেমিক কার্যক্রম চালু করা হয়, এটি আমাদের প্রথম কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী যেন টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আসে সেটার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করার দাবি জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার এবং শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে যেন আইসোলেশন তৈরি করা হয় শিক্ষার্থীদের জন্য।”

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের যেন কোনোভাবেই সেশনজটের আওতায় না পড়ে সেটার জন্য পাঠ্যক্রম সমন্বয় বা সেমিস্টার বা বর্ষের সময়সূচি যেন কমিয়ে নিয়ে আসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সকল ছাত্র সংগঠন যেন এ বাস্তবতায় শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মসূচি পালন করে, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে যেন কর্মসূচি পালন করে আমরা এই আহ্বান রেখেছি।

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ছাত্র ইউনিয়নসহ সব ছাত্র সংগঠনই সেপ্টেম্বরের মধ্যে হল খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বেতন ফি, উন্নয়ন ফিগুলো মওকুফের দাবি জানানো হয়। আইসলেশন সেন্টার তৈরি ও করোনা টেস্ট যেন শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি করা হয় সে দাবিও আমরা জানিয়েছি।

ছাত্রসংগঠনের নেতারা যেসব দাবি তুলেছেন

ছাত্রসংগঠনের নেতারা ছাত্রদের বেতন মওকুফের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন, খাবারের মান যেন নিশ্চিত হয়, স্বাস্থ্যসম্মত হয়, আর্থিক সঙ্কটে পড়া ছাত্রদের বিশেষভাবে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

ছাত্রনেতারা দলীয় পরিচয়ের বাইরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে এই সংকটকালে দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছেন। শিক্ষার পরিবেশ যাতে নিশ্চিত হয , গণতান্ত্রিক পরিবেশ যাতে বজায় থাকে। এছাড়াও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়েছেন। পুলিশ যেন প্রশাসনের কথা ছাড়া কাউকে আটক না করে, আইন-কানুন তৈরি করা সহজ কিন্তু এগুলো মানা কঠিন এ ব্যাপারে যেন সবাই সহযোগিতা করে।

উপাচার্য তাদের দাবিগুলোকে প্রশংসা করেছেন। তিনি স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) মেনে চলার জন্য ছাত্র সংগঠনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন সরকারের সাথে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে এখানে একটা ভ্যাকসিনেশন পয়েন্ট বা কেন্দ্র যেন থাকে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।