ছাত্রলীগের কাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পারিশ্রমিক দাবি
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিনা মূল্যের অক্সিজেন সেবা কার্যক্রম চালু করেছে ছাত্রলীগ। এ কার্যক্রমের আওতায় অক্সিজেনের সংকটে পড়া দেশের যেকোনো মানুষকে চিকিৎসকদের পরামর্শপত্র অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ করে আসছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
তবে সম্প্রতি এ কার্যক্রম পরিচালনায় নানা অভিযোগ উঠে এসেছে। এ কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যবহার করা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদদের (ডাকসু) কক্ষ। তার পাশাপাশি কার্যক্রমে যুক্ত করা হয়েছে ডাকসুর কর্মচারীদের। যা চব্বিশ ঘণ্টা দেখভাল করছে ডাকসুর কর্মচারীরা।
ডাকসুর কর্মচারীরা নির্দিষ্ট কার্য সময়ের বাইরে ছাত্রলীগের জন্য অতিরিক্ত সময় কাজ করায় সেই পাওনা চাওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে৷ পরবর্তীতে যদিও এটিকে ‘অনৈতিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তার অনুমোদন দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নাম প্ৰকাশ না করা শর্তে ডাকসুর একাধিক কর্মচারী জানান, বঙ্গমাতা অক্সিজেন সেবার শুরু থেকেই তারা সার্বক্ষণিক দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছে। তবে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোনো পারিশ্রমিক তাদের প্রদান করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের বঙ্গমাতা অক্সিজেন সেবার সাথে জড়িত ডাকসুর কর্মচারীদের ওভার টাইমের পারিশ্রমিকের একটি আবেদন ডাকসুর সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আসে। তবে ডাকসুর বর্তমান কমিটির মেয়াদ না থাকা, আবেদনে ডাকসুর সংশ্লিষ্টতা না থাকা এবং ছাত্রলীগের নামে আসায় পারিশ্রমিকের এ আবেদনকে ‘অনৈতিক’ উল্লেখ করে অনুমোদন দেয়নি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ।
বঙ্গমাতা অক্সিজেন সেবার সাথে সম্পৃক্ত ছাত্রলীগের সাহিত্য সম্পাদক আসিফ তালুকদার বলেন, এই সেবা পরিচালনার জন্য ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে। শুধুমাত্র সিলিন্ডারগুলো ডাকসুর রুমে রাখা হয়েছে। কাজের দেখভাল ছাত্রলীগের কর্মীরাই করছে। কর্মচারীদের কাজ শুধুমাত্র রুমের তালা খোলা এবং বন্ধ করা।
পারিশ্রমিকের জন্য ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদনের বিষয়টি অস্বীকার করেন আসিফ তালুকদার। তিনি বলেন, আবেদনের সাথে আমাদের কেনো সংশ্লিষ্টতা নাই। এ কার্যক্রমের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের অনুমতি নেয়া আছে। তবে অতিরিক্ত কাজের বাইরে যেহেতু ডাকসুর কর্মচারীরা কাজ করছে তারা ডিমান্ড করলে আমরা অবশ্যই তাদের পারিশ্রমিক দেব, সেটা আমাদের নিজস্ব তহবিল থেকে।
বিষয়টি নিয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের অফিস রয়েছে, এ কার্যক্রম তারা সেখানে চালাতে পারতো। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে বন্ধ সেখানে ডাকসু কেন খোলা থাকবে। ডাকসু রানিং থাকা অবস্থায় সেখানে বিয়ারের ক্যান, মদের বোতল রাখা দেখেছি। বন্ধ ক্যাম্পাসে তারা সেবার নামে কোনো মাদকের আখঁরা বসিয়েছে কিনা এটা খতিয়ে দেখা দরকার। এটা হতে পারে যারা মাদক ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট তারা নিরাপদে মাদক ব্যবসাকে প্রমোট করার জন্য ডাকসুকে ব্যবহার করছে। লিগ্যালিটির জন্য বঙ্গবন্ধুর ছবিকে যেমন আওয়ামী লীগের লোকজন ব্যবহার করে সে হিসেবেই বঙ্গমাতা অক্সিজেন সার্ভিস।
তিনি বলেন, এটার চাবি নাকি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছে থাকে। তাহলে এর সাথে ডাকসুর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত কিনা এটা খতিয়ে দেখা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেছেন, ডাকসু তো এখন নেই। তারা (ছাত্রলীগ) নিজেরা কাজ করবে, কর্মচারী নিবে কেন। নিয়মের বাইরে কিছু হবে না। নিয়মের বাইরে আমি কিছু অনুমোদন দিতে পারি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, এটা প্রাসঙ্গিক নয়। এটি সেবামূলক কার্যক্রম, এ সম্পর্কে আমি অবহিত রয়েছি। কিন্তু পারিশ্রমিকের জন্য কোনো আবেদন করা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে জানতে ডাকসুর সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোন বার্তায় বর্তমানে ডেপুটেশনে রয়েছেন বলে জানান এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের কথা বলেন।