১৪ আগস্ট ২০২১, ০৮:৩৮

ক্যাম্পাস না খুললে গাছতলায় ক্লাস নেবেন রাবি শিক্ষক

আ. আল মামুন  © সংগৃহীত

করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ থাকা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলে দেওয়া হবে তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি সরকার। তবে শিক্ষার্থীরা এটা মানতে নারাজ। তাদের কথা, বাংলাদেশে সবকিছু আগের নিয়মে চলছে। সেখানে কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তাছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানই খোলা রয়েছে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষকদের অনেকেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অতিদ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ খোলার জোরালো দাবি জানিয়েছেন।

এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে গাছতলাতেই ক্লাস নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আ. আল মামুন। শুক্রবার (১৩ আগস্ট) রাতে ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন।

আ আল মামুন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া পোস্টে লিখেছেন, ‘সরকার কী বলল না বলল আমার কিছু যায় আসে না। আমি আগামী সপ্তাহ থেকে প্রতি সোমবার আর মঙ্গলবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বিভাগে উপস্থিত থাকব। ক্লাসরুম খুলে না দিলে গাছের তলায় শিক্ষার্থীদের মিট করব এবং তারা পড়তে চাইলে পড়াব। (হুম আপনাদের তথাকথিত স্বাস্থ্যবিধির কথাও মনে রাখব।) সবাইকে আমন্ত্রণ।’

অনলাইনে ক্লাস নেয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা জানিয়ে আল মামুন লিখেছেন, ‘অনলাইনে ক্লাস নেয়া একটা হরর অভিজ্ঞতা। সপ্তায় আমি অন্তত ৮ ঘণ্টা ক্লাস নিই অনলাইনে। এর জন্য মিনিমাম ৪০ ঘণ্টা পড়ালেখা করি, অনেক সময় তারও বেশি। সেই সাথে ওই পড়ালেখা নিয়া আরও অন্তত ১০ ঘণ্টা টপিকগুলো নিয়ে ভাবি।

‘কিন্তু যখন অনলাইনে ক্লাস নিতে যাই- কোনো শিক্ষার্থীর চেহারা দেখতে পাই না, তারা প্রায় কথা বলে না। একটা ডার্ক স্ক্রিনের সামনে বকরবকর করি। তবু আমি এই মহামারি সময়ে পড়ানোর ব্যাপারে খুব সিরিয়াস হয়ে উঠেছি- শিক্ষার্থীদেরকে বুঝাইতে চাই আমার ভাবনাগুলো। কিন্তু আদৌ কিছু বুঝাইতে পারি কিনা তা কিছুই অনুমান করতে পারি না। সবই পণ্ডশ্রম মনে হয়। অন্য দেশের বাস্তবতা জানিনা, আমাদের বাস্তবতা এরকমই!’

তিনি লিখেছেন, অনলাইনে পড়াইতে পড়াইতে মনে হয় বদ্রিয়া কথিত সিমুলাক্রার দুনিয়ায় প্রবেশ করে গিয়েছি! আমিও আমি না, আমার শিক্ষার্থীরাও কেউ না- জাস্ট কিছু ডটডটড্যাশ! এরও আগের তাত্ত্বিক গাই দেবর্দোর 'সোসাইটি অব স্পেক্টেকাল' এর কথা নিশ্চয় আমি স্মরণ করব। মনে হয় একটা ভূত হয়ে অদ্ভুত উপায়ে ডার্ক স্ক্রিন নামক ভূতের সাথে বসবাস করছি। ক্লাস শেষ করে নিজেকে চিনতে পারি না!

‘সিমুলাক্রার এই দুনিয়া আমি চাই না, আমি চোখে চোখ রেখে পড়াতে চাই, তাদের প্রতিক্রিয়া বুঝতে চাই, তাদের আবেগ ও অনুভবকে স্পর্শ করতে চাই। আমি মানবিক থাকতে চাই।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে ড. মামুন জানান, আসলে এভাবে আর কতো! তাই আমি নিজ থেকে এমন উদ্যোগ নিয়েছি। সপ্তাহে দু'দিন আমি বিভাগে অবস্থান করব। শিক্ষার্থীরা যদি আসে, ক্লাস করতে চায় বিভাগের সভাপতির সাথে এ বিষয়ে কথা বলব। তারা যদি রাজি না হয় তহলে গাছ তলায় পড়াব, যদি শিক্ষার্থীরা পড়তে চায় বলে জানান তিনি।