ভিসি প্রার্থী তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি
উপাচার্য হওয়ার দৌঁড়ে থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আওয়ামী লীগপন্থী এই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ দাখিল করেছেন তারাও একই সংগঠন করেন।
চিঠিতে ১৬ জন শিক্ষকের স্বাক্ষর স্ক্যান করে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে দু’জন শিক্ষক নিশ্চিত করেছেন, তারা ওই কাগজে স্বাক্ষর করেননি। পুরোনো কোনো ইস্যুতে করা তাদের স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসানো হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বরাবর চিঠি পাঠানো হয়। তবে পৌঁছেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। চিঠি এই তিনজনের মধ্যে থেকে উপাচার্য নিয়োগ না দিতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তবে ওই তিন শিক্ষক বলছেন, তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য শিক্ষকদের একটি পক্ষ ‘নোংরা’ রাজনীতি করছেন।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়েছে তার মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’-এর আহ্বায়ক অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। অন্য দু'জনের নাম সরাসরি নেওয়া না হলেও বর্ণনা থেকে পরিচয় অনুমান করা যায়। একজন হলেন সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস। অন্যজন ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু। যাদের স্বাক্ষরে অভিযোগ করা হয়েছে তারা একই সংগঠনের স্টিয়ারিং কমিটির নির্বাচিত সদস্য।
অভিযোগের অনুলিপি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ ও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ বরাবর পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে অধ্যাপক হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, তিনি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের নানা অনিয়মের সহযোগী। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় পর্যায়ে সংগঠিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাকে সভা আহ্বানের জন্য স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যরা চিঠি দিয়ে বারবার অনুরোধ জানালেও তিনি নিষ্ফ্ক্রিয় ছিলেন। সাবেক উপাচার্যের মেয়াদের শেষ দিনে রাবিতে অবৈধভাবে ১৩৮ জনকে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়ার ঘটনায় তিনি এখনও প্রতিবাদ জানাননি। অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকায় তার পছন্দের কয়েকজনও রয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিতে আমার ইমেজ ভালো। আমার ইমেজকে ম্লান করার জন্য তারা এমন নোংরামি করছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় আমার নামে মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছেন। এমন মিথ্যা শুনতে শুনতে ক্লান্ত। এখন শুনছি তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে নানা অভিযোগ করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে হেয় করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এমন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক স্বনামধন্য শিক্ষককে তারা জামায়াত-বিএনপি আখ্যা দিয়ে নানা অপবাদ রটিয়েছেন। আমাকে বিএনপি-জামায়াত বানাতে পারেননি তাই ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করেছেন।'
ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু বলেন, চিঠির বিষয়টি আমি জানি না। ক্যাম্পাসে একটি পক্ষ নোংরা রাজনীতি শুরু করছে, সেটি দেখছি। চিঠি না দেখে এর বেশি মন্তব্য করতে পারব না।
সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমি চিঠিটি দেখেনি। সেজন্য চিঠির বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছি না। রাবিতে নিয়োগ বাণিজ্যের রেকর্ডিং ফাঁসের মতো নানা অনিয়মের সময় আমি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানকে ব্যবস্থা নিতে তাগাদা দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই জানেন, অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে সাবেক উপাচার্যের প্রশাসনের সঙ্গে আমার দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। আমি কখনোই কারও দুর্নীতির সহযোগী ছিলাম না।
অভিযোগের চিঠিতে যে ১৬ শিক্ষকের সই রয়েছে তাদের কেউ গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে নারাজ। চিঠিতে যে শিক্ষকদের সই রয়েছে তারা হলেন- অধ্যাপক তারিকুল হাসান, জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজা অপু, আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, ড. শহিদুল আলম, প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, তানজিমা জোহরা হাবিব, ড. জাহানুর রহমান, এসএম এক্রাম উল্যাহ, মিজানুর রহমান-২, শাহরিয়ার জামান, ওমর ফারুক সরকার, আব্দুল্লাহ আল মামুন, নাসিমা আখতার, আসাবুল হক ও আবু জাফর মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করবে এমন কাউকে পরবর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ফারুকী। তিনি বলেন, সৎ-যোগ্য ও দুর্নীতিমুক্ত একজন উপাচার্য চাই। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবান্ধব, শিক্ষার্থীবান্ধব ও পরিবেশবান্ধব হবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি করবেন। পাশাপাশি তিনি হবেন একজন দক্ষ প্রশাসক। তিন মাস হলো এখানে নিয়মিত উপাচার্য নেই। আমরা সরকারের কাছে দ্রুত একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি নিয়োগ দেওয়ার আবেদন জানাই।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম খান বলেন, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তি। তার হাত ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। আমরা এমন একজনকে এখান উপাচার্য হিসেবে চাই যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার উন্নতিতে কাজ করবেন।
প্রসঙ্গত, গত ৬ মে বিদায় নেন অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। এরপর তৎকালীন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহাকে রুটিন উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনিও গত ১৬ জুলাই মেয়াদ শেষ করে বিদায় নেন। এর পরদিন নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণ করেন।