করোনার বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঢাবির ল্যাব ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি

ঢাবির ল্যাব
ঢাবির ল্যাব  © ফাইল ছবি

গেল বছর মার্চ মাস থেকে করোনা সংক্রমণের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ল্যাব ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার না হওয়ায় এ ধরনের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে অন্য ল্যাবগুলোতেও। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বিশেষভাবে যত্নশীল থাকার নির্দেশনা দিয়েছে।

গত ৩০ জুন রেফ্রিজারেটর থেকে অগ্নিদুর্ঘটনা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগে। সেখানে রাখা অরগানিক সল্ট হতে গ্যাসের সৃষ্টি হয়ে বিস্ফোরণ হয় বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ, ফার্মেসি অনুষদ, জীববিজ্ঞান অনুষদ, আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সস অনুষদের ল্যাবগুলোতে কোটি টাকা মূল্যের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সেগুলো ব্যবহার করলে সবই সচল থাকতো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ইউভি-ভিস স্পেকট্রোমিটার, ল্যাবরেটরি থার্মোমিটার, ক্রোমাটোগ্রাফিক ইন্সট্রুমেন্টস, পিএইচ মিটার, ডিজোল্যুশন অ্যাপারেটাস, ডিজিটাল ওয়েট মেশিন, আল্ট্রাসনিক সনিকেটরের মতো মূল্যবান যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হওয়ার আশাঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া রেফ্রিজারেটরে রাখা কেমিক্যালগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরে এসব ল্যাবে নতুন করে বিদেশ থেকে এসব কেমিক্যাল রিএজেন্ট আনা সময়সাপক্ষে ও ব্যয়বহুল। এতে অনেক শিক্ষার্থীর থিসিসের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

ফার্মেসি অনুষদে ঘটা অগ্নি দুর্ঘটনার বিষয়ে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান জানান, নিরাপত্তারক্ষীদের ফোন পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু গেটের চাবি না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ভেতরে প্রবেশ করতে পারছিলেন না। পরে তালা কেটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটর এ সদস্য বলেন, ফ্রিজে অরগানিক সল্ট থাকার কারণে গ্যাস তৈরি হয়ে বিস্ফোরণ হয়। তবে ফ্রিজের সামনের পানির কল থেকে পানি আসায় এটি বোমার মতো বিস্ফোরিত হয়নি। অন্যথায় প্রচুর কেমিক্যাল থাকায় পুরো ভবনে আগুণ লাগতো বলে তিনি আশাঙ্কা করেন।

করোনার বন্ধে ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘লকডাউনে’ ল্যাব ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিছু জিনিস আছে ফ্রিজে রাখতে হয়। যা ৬ মাসের বেশি রাখা যায় না। বন্ধ থাকার ফলে এসব নষ্ট হচ্ছে। যন্ত্রপাতির স্থায়িত্ব কমে যাচ্ছে। গবেষণা কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়েছে।

ফার্মেসি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুর রহমান বলেন, করোনার বন্ধের কারণে ল্যাব ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারপরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্দেশনা দিয়েছেন ল্যাব সংশ্লিষ্টদের মনিটরিং করতে যাতে সবকিছু ফাংশনাল থাকে। তারপরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি ও লোডশিডিং এর কারণে পূর্ণাঙ্গভাবে এটি সম্ভব হচ্ছে না। আর কেমিক্যাল রিএজেন্টের মেয়াদ চলে গেলে পরীক্ষায় সঠিক রেজাল্ট আসবে না।

বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস ছামাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ল্যাব সংশ্লিষ্টরা যন্ত্রপাতি রক্ষায় সপ্তাহে দুই-একবার এসব মনিটরিং করেন।

 


সর্বশেষ সংবাদ