করোনায় ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

জমি বন্ধক রেখে ছেলেকে ঢাবিতে ভর্তি করেছিলেন সুমনের বাবা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মৃত সুমন হোসেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মৃত সুমন হোসেন  © ফাইল ছবি

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঝড়ে গেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমন হোসেন। গতকাল তিনি মৃত্যু বরণ করেন।আজ শনিবার (১৭ জুলাই) সকাল ১১টায় ঝিনাইদহে নিজ বাড়িতে সুমনের দাফন সম্পন্ন হয়।

সংসারে অভাব-অনটনের মধ্যেই পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন সুমন। হাতে টাকা না থাকায় ছেলেকে ভর্তি করতে জমি বিক্রি আর বন্ধক রাখেন বাবা। ছেলেকে ঘিরেই ছিল বাবা-মায়ের স্বপ্ন। পড়াশোনা শেষ করে বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করবে-এমন স্বপ্ন ছিল সুমনের। কিন্তু করোনার থাবায় সে স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।

সুমনের বাবা আমির হোসেন বলেন, 'আমার আর কিচ্ছু নেই। তাকে ছাড়া কী করে বাঁচবো। আমাদের আশা-ভরসা ছিল সুমন। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়েছি। বাবা-মায়ের আগে, সন্তানের চলে যাওয়া যে কত কষ্টের, তা বলে বোঝাতে পারবো না। আমার বাড়ি আর জমি মিলে এক বিঘা পরিমাণ আছে। ছেলেকে ভর্তি করতে জমি বিক্রি আর বন্ধক দিয়েছি। ভাবলাম ছেলে চাকরি পেলে সংসারের অভাব দূর হবে।'

সুমন হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন৷ করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়িতে ছিলেন সুমন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, পড়াশোনা শেষ করে সুমনের ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার স্বপ্ন ছিল। এজন্য সরকারি চাকরির পড়াশোনা করতেন।

তিনি আরও জানান, সুমন আমাকে আশ্বাস দিয়ে বলতো 'বাবা আমি চাকরি পেলে তোমাকে আর কষ্ট করা লাগবে না৷'
সুমনের ছোট ভাই সুজন হোসেন এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী।

জানা গেছে, সুমনের অসুস্থতার খবর বিভাগের শিক্ষকরা জানতে পারেন তার মৃ্ত্যুর দুদিন আগে৷ বিভাগের উদ্যোগে কিছু আর্থিক সহায়তা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন ড. ফারজানা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সুমনের অসুস্থতার সম্পর্কে প্রথমে আমরা অবগত ছিলাম না৷ দুদিন আগে আমাদের জানানো হয়। এতো কম সময়ে বিভাগের উদ্যোগে সামান্য কিছু অর্থ সংগ্রহ করেছি৷'

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'সুমনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা যায় কি-না, সে ব্যাপারে বিভাগ এবং হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।' 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, 'এই প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমাদের একজন শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করেছে। এটি আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। আমি সমাজের সবার প্রতি আহ্বান করবো যে, এ ধরনের সংগ্রামী পরিবারের পাশে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই যেন দাঁড়ায়। এটি মানবিক এবং সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ।'

 


সর্বশেষ সংবাদ