১৪ জুলাই ২০২১, ২১:৩০

বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার, স্বপদে বহাল হচ্ছেন জাবির সুদীপ্ত শাহীন

সুদীপ্ত শাহীন  © ফাইল ছবি

নানা অপকর্মের দায়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীনকে স্বপদে বহালের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ বুধবার অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিন্ডিকেট সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, “সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্ত কমিটির সুপারিশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে স্ট্রাকচার কমিটি বা তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত কমিটির সুপারিশে বরখাস্তের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বলা হয়। আজ সিন্ডিকেট সভায় এ নিয়ে আলোচনা হলে বিষয়টি বিবেচনা করে তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় সিন্ডিকেট।’’

এর আগে, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয় ।

অফিস আদেশে বলা হয়, গত ১৮ নভেম্বর অনলাইনে অনুষ্ঠিত বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় তিনটি অভিযোগের ঘটনায় গঠিত প্রাথমিক তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালে সুদীপ্ত শাহিন জীবিকানির্বাহ ভাতা পাবেন বলে সেই অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়।

সুদীপ্ত শাহিনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এই প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করা, মারধর, ব্ল্যাকমেইল, চাঁদাবাজি, মাদক সেবন করে কর্মচারীকে মারধর, বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়াতে আসা নারী দর্শনার্থীদের কটূক্তি, নারী সংবাদকর্মীকে হেনস্তা করাসহ ৩০টিরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে।

এরমধ্যে ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ক্যাম্পাসে আগত মোহাম্মদ শামীম রহমান, ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের উপস্থাপিকা এবং একই বছরের ২ ও ৩ ডিসেম্বর আকবর আলী ও আব্দুর রাজ্জাকের দায়েরকৃত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। বাকি অভিযোগগুলোর বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এছাড়া, গত বছরের ১৬ অক্টোবর ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে নাহিদ নামের এক ভ্যানচালককে পিটিয়ে পা ভেঙে দেয় সুদীপ্ত শাহীন। এরপর ক্যাম্পাসে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সেসময় আট শতাধিক শিক্ষার্থী গুগল ফরমের মাধ্যমে অনলাইনে গণস্বাক্ষর করে সুদীপ্ত শাহিনের অপসারণসহ চার দফা দাবি জানান।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আগের অভিযোগ তদন্তে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া ভ্যানচালক নাহিদকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেয়া ও চিকিৎসার খরচ দেয়ার কথা বললেও এখনও কিছুই দেয়নি প্রশাসন।

অভিযোগ আছে সুদীপ্ত শাহীন সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের আত্মীয়। যার কারণে এতসব অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ছাড় পেয়ে যান এই নিরাপত্তা কর্মকর্তা। এতে দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছেন তিনি।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।