জাবির নিখোঁজ ছাত্র রাজু কবে ফিরবে?
- জাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২১, ০৬:০৯ PM , আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২১, ০৬:০৯ PM
১৩ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) রসায়ন বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান রাজু (২৭)। এ ঘটনায় উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে তাঁর পরিবার। ইতোমধ্যে একমাত্র নাতির নিখোঁজ সংবাদ শুনে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন রাজুর দাদি। এক বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে স্ত্রী হাফসা আক্তার প্রহর গুনছেন রাজুর ফিরে আসার।
তার গ্রামের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটার গোলবুনিয়ায়। চাকরির প্রস্তুতি ও টিউশনের জন্য মিরপুরের একটি মেসে ভাড়া থাকতেন তিনি। গত ২৪ জুন সন্ধ্যায় মেস থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি তিনি। তারপর থেকে তার ব্যবহৃত দুটি নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়।
গত ২৬ জুন এ নিয়ে পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে রাজুর পাশের রুমের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। যিনি পেশায় একজন গার্মেন্টস কর্মী। রাজু যেসময় ঘর থেকে বের হন তখন মিজানুর তার কর্মস্থলে ছিলেন বলে জানান।
ওই দিনই একটি অপরিচিত নম্বর থেকে রাজুর মা আকলিমা আক্তারের কাছে কল করে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। পরে রাজুর ফোন থেকে আবার কল করে ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। এতো টাকা দেওয়ার বিষযে অপারগতা জানালে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে রফা করার কথা জানানো হয়। পরিবার থেকে ১৩ হাজার টাকা পাঠালে সব নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়।
রাজুর বড় দুলাভাই কামাল হোসেন প্রতারক চক্রের এই বিষয়গুলো সহ পুরো ঘটনা উল্লেখ করে পল্লবী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ২৯ জুন একটি নম্বর থেকে কল করে বলা হয় রাজুকে টাঙ্গাইলে রাস্তার পাশে পাওয়া গেছে। চিকিৎসার কথা বলে আবারও ৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র।
কিন্তু পল্লবী থানা পুলিশ বলছে, রাজুর মুঠোফোন ২৪ জুন থেকেই বন্ধ আছে। যাঁরা বার বার ফোন করে টাকা চাচ্ছে তারা আসলে প্রতারণা করছে।
এসব অভিজ্ঞতা নিয়ে নিরূপায় হয়ে রাজুর সন্ধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে জাবির রসায়ন বিভাগে সংবাদ সম্মেলন করে তার পরিবার এবং জাবির রসায়ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সেদিন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পল্লবী থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য ছিল, পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের সব শাখা বিষয়টি দেখছে। দ্রুততা ও আন্তরিকতার সাথে বিষয়টি দেখছেন বলে জানান তিনি। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনের ১ সপ্তাহ হলো পুলিশ কোনোরকম খোঁজ দিতে পারলো না।
তবে পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার আরিফুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার বক্তব্যে পাওয়া যায়নি নতুন কিছু। তিনি বলেন, এ নিয়ে আমাদের বিভিন্ন বিভাগ কাজ করছে। তবে বলার মত কোনো অগ্রগতি আমরা এখন পর্যন্ত পাই নি।
প্রতারক চক্রের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ১৩ হাজার টাকা যেই নম্বর থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে সেই নম্বরটি মৌলভীবাজারের। সেখানে আমরা গেছি তবে তাদেরকে দেখে আমাদের মনে হয়নি এরা এই ধরনের কাজ করতে পারে। সম্ভবত তার আইডি কার্ড নিয়ে প্রতারক চক্র রেজিস্ট্রেশন করেছে। প্রয়োজন হলে আবার সেখানে যাবো।
টাঙ্গাইল থেকে রাজুর চিকিৎসার জন্য অর্থ নেয়া চক্রটি সম্পর্কে বলেন, বর্তমান একটি চক্রের সৃষ্টি হয়েছে যারা কারো নিখোঁজ সংবাদ পেলেই পরিবারের কাছ থেকে সুকৌশলে অর্থ হাতিয়ে নেয়। সাম্প্রতিক সময়ে আবু ত্বহা আদনানের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা দেখেছি। এখন যে কেউ নিখোঁজ হলে এলেঙ্গা মহাসড়কের কথা বলে একই কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নেয়। এটার উপর কাউন্টার টেররিজম ইউনিট কাজ করছে।
রাজুর স্ত্রী হাফসা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাজুর নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেছি কিন্তু কেউ কোনো সুখবর দিতে পারলো না। শ্বাশুড়িসহ ১ বছর বয়সী একটি বাচ্চাকে নিয়ে সর্বত্র ছুটে বেড়িয়েছি। সর্বশেষ গত ৫ তারিখ বরগুনায় সংবাদ সম্মেলন করে আমরা তার সন্ধান চেয়েছি। পুলিশ আমাদের ফোন ধরতে চায় না, কখনও ধরলে বলে দেখছি।
হাফসা আক্তার আরও বলেন, তার শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। ১ বছর বয়সী বাচ্চাটাও কিছু খাচ্ছে না। তিনি এখন দিশেহারা অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান। হাফসা তার স্বামীর আশু সন্ধান দাবি করেন।