০৫ জুলাই ২০২১, ১৬:৫৫

করোনায় শিক্ষার্থীরা হতাশায় ভুগছে বেশি, জাবির গবেষণা

  © প্রতীকী ছবি

করোনা মহামারিতে বাংলাদেশের প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীরা করোনা ভীতিতে বেশি আক্রান্ত হয়েছে। ভীতির কারণে ৩৬.৫৭ শতাংশ মানুষ বিষন্নতায় ভুগছে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগ পরিচালিত একটি গবেষণা সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে আসে।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, মহামারিতে অন্যান্য পেশাজীবীর চেয়ে শিক্ষার্থীরা বিষন্নতা (ডিপ্রেশনে) ভুগছে বেশি। এছাড়া উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাযোগ্যতা সম্পন্ন ও অধ্যয়নরত মানুষের মাঝে বিষন্নতা বেশি।

গত ২৪ জুন বিশ্বখ্যাত এলসেভিয়ার (ELSEVIER) এর হিলিয়ন নামক সায়েন্টিফিক জার্নালে 'Fear and depressive symptoms amid COVID-19: A cross-sectional pilot study among adult population in Bangladesh' শিরোনামে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়।

জাবি পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাজউদ্দীন সিকদার ও প্রভাষক সাহাদাত হোসেনের তত্বাবধানে সমীক্ষাটি পরিচালনায় অংশ নেন জাবি পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের তিন শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম, সাদিয়া সুলতানা ও আবিদ হাসান খান।

এছাড়া বিদেশ থেকে ইংল্যান্ডের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক পরিচর্যা ও মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের তাসদিক হাসান ও চীনের সাংহাই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের জেযহি লি এ গবেষণাপত্র পর্যালোচনা করেন।

এ ব্যাপারে প্রভাষক সাহাদাত হোসেন বলেন, সমীক্ষাটি বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোভিড-১৯ মহামারিতে ভয় ও বিষন্নতার স্তর এবং এর পেছনের কারণগুলো নির্ধারণের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়।

তিনি আরও বলেন, গবেষণাটিতে ২০ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল ২০২০ সারাদেশ থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০ জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ অনলাইন মাধ্যমে অংশগ্রহণ করে গুরুত্বপুর্ণ মতামত প্রদান করে। যাদের সকলের বয়স ১৮ থেকে ৬৮ বছরের মধ্যে। এদের মধ্যে ৬৩.৪৩ শতাংশ পুরুষ ও ৭৬.১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী।

সাহাদাত হোসেন বলেন, কোভিড-১৯ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভীতি ও হতাশা নিরূপণের জন্য যথাক্রমে Bangla Fear of Covid-19 Scale এবং Bangla Patient Health Questionnaire (PHQ-9 Scale) ব্যবহার করা হয় এবং নিখুত বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষকবৃন্দ সিদ্ধান্তে উপনীত হন।

সমীক্ষার ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে করোনা ভীতি ১.৮৪ গুণ বেশি ছড়িয়েছে। এর ফলে তাদের মধ্যে ১.৯০ গুণ হতাশা বেশি। এছাড়া সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মোট ৩৬.৫৭ শতাংশ মানুষ হতাশার মধ্যে রয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, সুস্থ ব্যক্তিদের তুলনায় জটিল রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এজমা, হৃদরোগে আক্রান্তদের মধ্যে করোনা ভীতি বেশি এবং তারা অন্যান্যদের তুলনায় বেশি হতাশায় ভুগে। এদিকে যারা মহামারিকে অত্যন্ত বিপজ্জনক মনে করে তাদের মধ্যে মহামারি সম্পর্কিত ভীতি বেশি। বিপরীতে মহামারিকে হালকাভাবে দেখছে এমন মানুষের মাঝে হতাশা কম।

গবেষণার বিষয়ে জাবি পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সভাপতি ও সহযোগী অধ্যাপক তাজউদ্দীন সিকদার বলেন, কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম ভঙ্গ করলে ভাইরাস ছড়াতে পারে বিশ্বাসী লোকদের মাঝে এবং যারা নিজেদেরকে করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ মনে করেনা তাদের মধ্যে করোনা ভীতি বেশি।

তিনি বলেন, যারা নিজেদের হাত সাবান, পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিস্কার রাখে তাদের মাঝে করোনা ভীতি কম। অন্যদিকে করোনা প্রতিরোধে উদাসীন মানুষের ভীতি অন্যান্যদের তুলনায় কম।

গবেষণার অন্যতম সহযোগী সাদিয়া সুলতানা বলেন, কোভিড-১৯ সম্পর্কিত বিশেষ জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি, প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ভীতি ও বিষণ্ণতা একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই করোনাভাইরাস প্রতিরোধের সাথে জনসাধারণের করোনাভীতি ও হতাশার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত।

গবেষক ও শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম বলেন, জনগণের কোভিড-১৯ এর ভীতি ও বিষন্নতার লক্ষণগুলো দূর করতে পারলে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ কার্যক্রম সফলতা পাবে যা করোনাভাইরাসের ভবিষ্যত ঢেউগুলো মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।