ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর করবে ঢাবির গবেষক দলের অভিনব উদ্ভাবন
বর্তমান নগর জীবনে জলাবদ্ধতা এক চরম ভোগান্তির নাম। তবে এসব ভোগান্তি দূরে ঠেলে দিতে এক অভিনব উদ্ভাবন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। ঢাবির গবেষক দল ‘পানি পুনরুদ্ধার কূপ’ নামে একটি কূপ উদ্ভাবন করেছেন।
এ উদ্ভাবক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন ঢাবির আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার। তার সঙ্গে ছিলেন ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ভূঁঞাসহ আরো কয়েকজন।
বৃষ্টির পানি মাটির গভীরে পৌঁছাতে পারছে না। তাই নিচে নামছে ভূগর্ভে থাকা পানির স্তর। আর দিনদিন পানির সংকট তীব্র থেকে তীব্র হবে। একসময় শহরবাসীর জন্য পানির জোগান দেয়া কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। ভূগর্ভের এই পানির স্তর নিচে নামতে থাকায় বিকল্প ব্যবস্থা নিতে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও কোনো স্থায়ী সুফল পাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে জলাবদ্ধতা নিরসন করে পানি মাটির গভীরে পৌঁছে দিতে গবেষকদলের এই পদ্ধতিটি সুফল বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
উদ্ভাবিত এ পদ্ধতির পরীক্ষা করে করে শতভাগ সফলতা পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের ভেতর একটি ‘পানি পুনরুদ্ধার কূপ’ স্থাপন করে সেখানে পরীক্ষা চালান তারা। সেখানে তারা দেখতে পায়, যেখানে বৃষ্টি হলে এক দুদিনের বেশি সময় পানি জমে থাকতো সেখানে এটির মাধ্যমে বৃষ্টি হওয়ার এক ঘণ্টার চেয়ে কম সময়ের মধ্যে পানি মাটির গভীরে পৌঁছে যাচ্ছে, জলাবদ্ধতা থাকছে না।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতারের বলেন, ঢাকা শহরের ভূগর্ভের পানির স্তর দিনদিন নিচে নেমে যাচ্ছে, প্রতি বছর নিচে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্যোগকে নিরসন করতে আমরা কাজ করেছি।
গবেষকদের অন্যতম ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা বলেন, ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এতে নষ্ট হয় অসংখ্য মানুষের গুরুত্বপূর্ণ কর্মঘণ্টা। এটিকে দূর করতে এবং শহরের মানুষের পানি সংকট যাতে তীব্র না হয় এটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করি।
কোথায় কি পরিমাণ পানি জমে যায় সে হিসেব করে কতটি কূপ খনন করে পানি দ্রুত নিষ্কাশন করা যায় সেটি গাণিতিক উপায়ে মডেল তৈরি করে কাজ করলে সহজেই শহরের জলাবদ্ধতা দূর হবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
যেভাবে তৈরি হয় ‘পানি পুনরুদ্ধার কূপ’
প্রথমে একটি বড় লম্বালম্বি পরিখা খনন (ট্রেঞ্চ) করা হয়। সেখানে ছোট ছোট পাথর কণা ও নিজস্ব কিছু ফিল্টার ব্যবহার করা হয়। সেটার ভেতর ১০-২০ ইঞ্চি ডায়ামিটারের একটি গভীর কূপ খনন করা হয়। মাটির যেই স্তর দিয়ে পানি নিচে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হয় সেই ‘মধুপুর ক্লে’ স্তর এর নিচ পর্যন্ত গভীর করে দেয়া হয়। পরে যেখান থেকে পানি নিচে যেতে কোনো বাধা থাকবে না সেই স্তরে কূপ শেষ করা হয়। ফলে বৃষ্টির এই পানি ভূগর্ভের প্রাকৃতিক পানির স্তরে পৌঁছে। আমাদের নিজস্ব ফিল্টারের মাধ্যমে পানি কিছুটা পরিশোধিত হয়, পরে নিচে গিয়ে আরো পরিশুদ্ধ হয়। এই পদ্ধতির ফলে একটা সিস্টেমেটিক উপায়ে এটি করে পানি নিচে যায়, ফলে জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসন হয় দ্রুত।