লকডাউনেও চলবে জাবির চূড়ান্ত পরীক্ষা
মহামারিতে প্রায় ১৬ মাস ধরে বন্ধ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ। ফলে তৈরি হয়েছে দীর্ঘ সেশনজট। এর মধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু করেছিলো চূড়ান্ত পরীক্ষা। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থগিত হয়েছে সেসব পরীক্ষার রুটিন। তবে ব্যতিক্রম সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। সিদ্ধান্ত হয়েছে জাবির চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে অনলাইন মাধ্যমে।
এর মূলে রয়েছে 'দুর্যোগকালীন পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২১' নামে একটি বিশেষ আইন। গত ২রা জুন অনুষ্ঠিত বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জাবি সিন্ডিকেট।
এদিকে সকল ধরণের অনলাইন পরীক্ষার ফি মওকুফের ঘোষণা দিয়েছে জাবি প্রশাসন। সোমবার (২৮ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, 'লকডাউনের মধ্যে অনলাইনে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং স্নাতকোত্তর ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এছাড়া মহামারি পরিস্থিতির কারণে নিয়মিত, অনিয়মিত, বিশেষ, মানোন্নয়ন পরীক্ষার ফি মওকুফ করা হলো।'
পরীক্ষার বিষয়ে সিন্ডিকেটের সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, '২৭ মে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশকৃত প্রস্তাব অনুযায়ী সিন্ডিকেট এই বিশেষ আইন অনুমোদন করেছে। এখন এ অধ্যাদেশের কার্যবিবরণী অনুসারে বিভাগগুলো পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করবে।'
অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়, 'অনলাইন পরীক্ষাতে অ্যাসাইনমেন্টে ১০ নম্বর, ওপেন বুক এক্সাম ১০ নম্বর এবং ভাইভায় ৩০ নম্বর রয়েছে। এই ৫০ নম্বরকে আবার ৭০ নম্বরে শতাংশ হারে রূপান্তর করা হবে। পাশাপাশি ক্লাস টিউটোরিয়াল পরীক্ষার ২০ নম্বর এবং ক্লাসে উপস্থিতির উপর ১০ নম্বর। এই ১০০ নম্বরে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এছাড়া স্বশরীরে সম্পন্ন ক্লাসগুলো যদি ৫০ শতাংশের বেশি হয়ে থাকে তবে সেই ৫০ শতাংশকে ধরে মার্কস গণনা করা হবে এবং অনলাইন ক্লাস সমূহের ক্ষেত্রে মার্কস গণনা করা হবে না।'
এব্যাপারে দুর্যোগকালীন পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২১ এর টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার বলেন, 'মহামারিতে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে হতাশা ও বিষন্নতায় ভুগছিলো। তাদের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে এ অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি বিভাগ পরীক্ষা গ্রহণ শুরু করেছে। আশা রাখি পরীক্ষা গ্রহণে মেজর কোন সমস্যা হবে না।'
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রভোস্ট এবং করোনা পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ কমিটির সদস্য অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, 'কিছু বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি পরীক্ষা শুরু করলেও পরে তা স্থগিত করেছে। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের কল্যাণ চিন্তা করে অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬টি বিভাগ ও ৩টি ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন ব্যাচের এ বিশেষ অধ্যাদেশ অনুসারে পরীক্ষা গ্রহণের সূচিপত্র তৈরি হয়েছে। ১লা জুলাই হতে শুরু হবে এসকল পরীক্ষা।
উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, 'কোভিড মহামারিতে শিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে অনলাইন ক্লাস অব্যাহত রয়েছে। অনলাইন পরীক্ষা নেওয়ার জন্য একটি নতুন অধ্যাদেশ পাস করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক বিভাগের বিশেষ পরীক্ষা শুরু হয়েছে।'
ইতোমধ্যে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অনলাইনে লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উজ্জীবিত শিক্ষার্থীরা।
সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (৪৬ ব্যাচ) শিক্ষার্থী জিসান এলাহী সুমন বলেন, 'আমাদের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের পরীক্ষা অফলাইনে হওয়ায় স্থগিত হয়েছে। কিন্তু আমাদের পরীক্ষা ২৭ তারিখ হতে যথারীতি বহাল রয়েছে। এজন্য প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।'
তিনি বলেন, 'অনলাইনে পরীক্ষা দিতে পারায় আমাদের মধ্য থেকে মানসিক চাপ কমে গিয়েছে। একই সাথে মহামারিতে সৃষ্ট সেশনজট কিছুটা হলেও নিরসন হচ্ছে। ঘরে থেকেই পরীক্ষা দেওয়া যাচ্ছে ফলে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে সমস্যা হচ্ছে না।'