কললিস্টের সূত্র ধরে চলছে ঢাবি ছাত্রী তুষ্টির মৃত্যুর তদন্ত
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১১ জুন ২০২১, ১২:০৩ AM , আপডেট: ১১ জুন ২০২১, ১২:২৯ AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান তুষ্টির মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য। সাবলেটের রুমমেট ও বন্ধুরা এ ঘটনাকে স্বাভাবিক মৃত্যু বললেও তার পরিবার তা মানতে নারাজ। তাদের অভিযোগ মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত অনেক বিষয়ের সঠিক উত্তর মিলছে না।
তাই এবার কললিস্টের সূত্র ধরে তুষ্টির রহস্যজনক মৃত্যুর তদন্ত চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তুষ্টি যে মুঠোফোন ব্যবহার করতেন সেটির সকল কললিস্ট বের করে কাদের সঙ্গে তিনি কথা বলতেন তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। এ ছাড়া এসএমএস কনটেন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যাসেঞ্জারসহ যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করতে কাজ করছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। মুঠোফোনে দুই থেকে তিনজনের সঙ্গে তার বেশি কথা হয়েছে বলে জানায় সূত্রটি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আগামী সপ্তাহে পাওয়ার কথা রয়েছে। এটা পেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এদিকে তুষ্টির রহস্যজনক মৃত্যুতে তার পরিবার এখনো নিশ্চিত নয় আসলে কী ঘটেছে? পরিবারের অভিযোগ কয়েকটি বিষয়ের সঠিক উত্তর মিলছে না। শিক্ষার্থীর পারিবারিক সূত্র জানায়, একটি সাবলেট রুমে থাকতেন চার জন।
গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় তুষ্টির এক রুমমেট জানিয়েছে, তুষ্টির অ্যাজমার সমস্যা ছিল। সে ইনহেলার ব্যবহার করতো। পরবর্তীতে সে জানায়, অ্যাজমা এবং ইনহেলার ব্যবহারের কথা তুষ্টির বাবা-মা তাকে জানিয়েছেন। যেটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে জানায় তুষ্টির পরিবার। তুষ্টিদের রুমে থাকা চারজন রুমমেটের মধ্যে একজন রাত ২টার সময় একবার সজাগ হয়ে বাথরুমের দরজা বন্ধ দেখে পুনরায় ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর সকালে তাদের সাবলেট দেয়া নারী তাদের ডাকাডাকির পরে ঘুম ভাঙে। এর আগে তাদের তিনজনের কেউ রাতে একবারের জন্যও বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি? এটা বিশ্বাস করতে পারছেন না তুষ্টির পরিবার।
সূত্র জানায়, তুষ্টিকে বাথরুম থেকে কি অবস্থায় বের করা হয় এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর মিলছে না। তুষ্টির রুমমেট রাহনুমা তাবাসসুম রাফি বলেন, ঘটনার আগের দিন সকাল ১১টায় ঘুম ভাঙলে নাস্তা শেষে তুষ্টি হলে যায় তোষক আনতে। এরপর আমরা নিউমার্কেটে চুলের কালো ক্লিপ এবং রাবার কিনতে যাই। যখন বের হই তখন রোদ থাকলেও পরবর্তীতে বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় আমাদের কাছে কোনো ছাতা ছিল না। নিউ মার্কেটে আমরা একাধিক দোকান ঘুরলেও কিছু কেনা হয়নি। আসার সময় তুষ্টি জানায়, বৃষ্টিতে ভেজার কারণে ওর শরীর ভালো লাগছে না। এ সময় তুষ্টি নাপা ওষুধ ক্রয় করে। বাসায় ফেরার পর অন্যান্য দিনের মতো আমিই দুপুরের রান্না সম্পন্ন করি। এ সময় তুষ্টি দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। দুপুর তিনটায় আমি ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় তুষ্টিকে ডাকলে সে জানায় যাবে না। এ সময় আমাদের আরেক বন্ধু ফোন দিলে তাকেও তুষ্টি যাবে না বলে জানায়। তিনি বলেন, এরপর রাত ৯টার দিকে বাসায় ফিরে দেখি তুষ্টি ফেসবুকে ফানি ভিডিও দেখছে। আমরা একসঙ্গে রাতের খাবার খাই। এরপর অ্যালার্জির ওষুধ খেয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। এ সময় তুষ্টি মুঠোফোনে সিনেমা দেখছিল। সকাল সাড়ে ৬টায় সাবলেট ভাড়া দেয়া আন্টির ডাকে ঘুম ভাঙে। এ সময় তিনি উচ্চ স্বরে বলতে থাকেন, বাথরুমে কে গেছে। সারারাত বাথরুমে কল দিয়ে পানি পড়ছে। আন্টির ডাক শুনে ঘুম ভেঙে দেখি বাথরুমের দরজা বন্ধ। এ সময় তুষ্টির বিছানায় ওর ফোন পড়ে থাকতে দেখে নিশ্চিত হই তুষ্টিই বাথরুমে আছে।
বাথরুমের দরজা একাধিকবার চেষ্টা করেও খুলতে না পেরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু রাজুকে ফোন দিয়ে পুরো বিষয়টি জানাই। এরপর তুষ্টির বাবাকে ফোনে জানালে আঙ্কেল বাথরুমের দরজা ভেঙে তুষ্টিকে বের করতে বলেন। প্রতিবেশী এক আঙ্কেল এসে ভেন্টিলেটর দিয়ে দেখতে পায় তুষ্টির পা দুটো বাথরুমের দরজার দিকে দিয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। এরপর রাজু ৯৯৯-এ ফোন দিলে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে তুষ্টিকে উদ্ধার করে।
তুষ্টির চাচা ইমাম হোসেন মেহেদী বলেন, ঘটনার দিন রাতের পুরো সময় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেলে তুষ্টির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে। রাতের বড় একটি সময় ধরে তুষ্টি বাথরুমে পড়ে ছিল। অথচ তার রুমমেটদের কেউ বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন না। অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের মেয়ের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে চাই। এটা স্বাভাবিক, না কী অস্বাভাবিক মৃত্যু ছিল?
লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, আগামী সপ্তাহে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। তদন্তের প্রয়োজনে শিক্ষার্থীর ব্যবহৃত মুঠোফোন থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।