ঢাবির ১০০ বছরের পুনর্মিলনী ফেসবুক গ্রুপে!
আগামী ৩০ জুন শতবর্ষ পূর্ণ হবে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী ও প্রধান উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। শতবর্ষ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের নানা আয়োজন করার কথা থাকলেও করোনার প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট সংকটে সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষকে সামনে রেখে অনলাইনে একাধিক ওয়েবিনারের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে, ১০০ বছরের পুনর্মিলনীকে সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি এক্স-স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন নামক ফেসবুক গ্রুপটি। মিনিটে মিনিটে আসছে পরিচিতিমূলক পোস্ট। দীর্ঘদিনের ব্যবধানে পরিচিত অনুজ-অগ্রজদের দেখে আপ্লুত হচ্ছেন অনেকেই।
২০১৮ সালে রাজধানীর উত্তরায় বসবাসরত ঢাবির কিছু প্রাক্তন শিক্ষার্থী মিলে ঢাকা ইউনিভার্সিটি এক্স-স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন উত্তরা নামে ফেসবুক গ্রুপ খোলেন। সেখানে একে অপরের সহযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতা দেখে অভিভূত হন উদ্যোক্তারা। জীবনের প্রয়োজনে কেউ কেউ উত্তরা ছেড়ে ঢাকা বা দেশের অন্যত্র বসতি গড়ে তোলেন। পরে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন, শুধু উত্তরা নয় সবার জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা দরকার।
উত্তরার গ্রুপটিকেই মাস তিনেক আগে বদলে ঢাকা ইউনিভার্সিটি এক্স-স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন নাম দিলেন। দুই হাজারের কিছু বেশি সদস্য থেকে গত চার-পাঁচ দিনে হু হু করে বেড়ে গেল সদস্য সংখ্যা। এখন প্রতি মিনিটে মিনিটে আসছে পরিচিতিমূলক পোস্ট এবং নতুন নতুন সদস্যযুক্তির আবেদন। আজ শনিবার (৫ জুন) সকালে ৫৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এর সদস্য সংখ্যা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানাচ্ছিলেন গ্রুপটির উদ্যোক্তাদের অন্যতম একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ড. শরীফুল ইসলাম দুলু। আগামীকাল রবিবার (৬ জুন) থেকে গ্রুপটি আর পাবলিক থাকছে না বলেও জানান শরীফুল ইসলাম দুলু।
তিনি বলেন, প্রাইভেসি ও নিরাপত্তার কথা ভেবে এটিকে প্রাইভেট করার আবেদন দেওয়া হয়েছে। ফেসবুক তাদের নিয়মে কিছুটা সময় নিচ্ছে। বিড়ম্বনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকেরই ফেসবুক আইডি লকড। কোনো তথ্যই দেখার উপায় থাকছে না। সেক্ষেত্রে সত্যিই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী কি না তা যাচাইয়ের সুযোগ থাকছে না।
সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন থেকে শুরু করে ব্যাংকিং পেশায় ক্যারিয়ার যাত্রা করা তরুণ তুর্কি তুহিন খান। দেশে বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও নিজের ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা ঠিকই সময় বের করে নিচ্ছেন গ্রুপটাতে একটু ঢুঁ মারতে। নিজের প্রিয় ছবিটি যুক্ত করে দিচ্ছেন পরিচিতি পোস্ট। সেখানে অনেকে ঢাবি ক্যাম্পাসের সেই দিনগুলোর কথা লিখতে গিয়ে হয়ে উঠছেন স্মৃতিকাতর।
পোস্ট দিয়েছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীসের মা সালমা আনজুম লতা। দর্শন বিভাগের ১৯৭৭-৭৮ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। শাহরিয়ার নাফীসসহ দুই ছেলেও পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়াও দেশে বিদেশে অবস্থানরত সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার, অভিনেতা থেকে গবেষক, শিক্ষক, বিচারক, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা বেশ আগ্রহের সঙ্গে নিজেদের পরিচিতি পোস্ট দিচ্ছেন।
প্রস্তাবও উঠছে নানাবিধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান মামুন তাঁর ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে গ্রুপটি দেখে ভাল লাগার কথা জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতিতে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইদের অবদানের কথা উল্লেখ করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও শিক্ষা পরিবেশের উন্নতিতে কীভাবে অবদান রাখা যায় তা ভেবে দেখার আহ্বান জানান।
ড. কামরুল হাসান মামুন লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টাতো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভালো হয়ে যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য সরকার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক, এলামনাই, সাধারণ জনগণ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই কেবল ভালো হতে পারে।
এদিকে গ্রুপের নাম নিয়ে পরামর্শসহ পোস্ট দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী মাজেদ। সেখানে তিনি বলেন, ঢাকা, ইউনিভার্সিটি ও অ্যাসোসিয়েশন ইংরেজিতে এই তিন শব্দের শুরুতে বড় হাতের অক্ষরে ডি, ইউ এবং এ থাকলেও এক্স-স্টুডেন্টসের ই এবং এস ছোট হাতের লেখা হয়েছে। সবকটি শব্দ বড় হাতের লিখলে মানানসই হতো বোধ হয়।
এ বিষয়ে গ্রুপের অ্যাডমিন শরীফুল ইসলাম দুলু জানালেন, এরই মধ্যে নামের আদ্যক্ষর যুতসই করে পরিবর্তনের আবেদন দেয়া হয়েছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এতে নাকি ২৮ দিনের মতো সময় নেয়। এটাও ঠিক হয়ে যাবে।