'আব্বা করোনা শেষ হলেই একটা কিছু করব' মৃত্যুর আগে বাবাকে বলেছিল হাফিজ

মৃত হাফিজুর রহমান
মৃত হাফিজুর রহমান  © ফাইল ছবি

ছেলে দেশসেরা বিদ্যাপিঠে পড়াশোনা করে। পড়াশোনা শেষ করেই একটা ভালো কিছু করবে। পরিবারের হাল ধরবে। বাবা-মা আর পরিবারের কষ্টের দিন শেষ হবে। ছেলেকে ঘিরে তাদের কত স্বপ্ন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছেই পরিবারের এতটুকু প্রত্যাশাতো থাকতেই পারে। যার জন্য সন্তানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য বাবা-মা কত ত্যাগ স্বীকার করে। সেই সন্তানও সবসময় বুকের ভেতর বাবা-মায়ের সেই স্বপ্নকে লালন করতে থাকে।

ঢাবির তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের হাফিজুর রহমানের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ছিলো না। তার বাবা স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করেন। বড় ভাই একটি ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। পরিবারে এছাড়াও মা ও একটি বোন আছে। তার বাবা-মা তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতো। প্রত্যাশা ছিলো অনার্স শেষ করে হাফিজ বিসিএস ক্যাডার হবে বা ভালো কোনো চাকরি করবে। পরিবারের দুঃখের দিন শেষ হবে। কিন্তু বিধি বাম। তাদের সে স্বপ্ন অধরাই থেকে গেলো। কি এক নিষ্ঠুর নিয়তি কেড়ে নিলো হাফিজের প্রাণ। হাফিজকে হারিয়ে তার বাবা-মা এখন প্রায় পাগলপ্রায়। মানসিক ভাবে চরম বিপর্যস্ত। স্বাভাবিক অবস্থায় এখনো ফিরে আসতে পারেনি।

হাফিজের বড় ভাই মাসুম ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, হাফিজ সবসময় হাঁশিখুশি থাকতো। বিশ্ববিদ্যালয়েও আমার ভাইয়ের সাথে সবার সুসম্পর্ক ছিলো।

বাবাকে বলতো,'বাবা, করোনার কারণেতো অনার্সটা এখনো শেষ করতে পারতেছি না। অনার্স শেষ করেই ভালো একটা চাকরিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করবো'। নিখোঁজ হওয়ার দিন বিকেলেও মায়ের সাথে ফোনো কথা বলেছিলো। তার কথা-বার্তা, আচার-আচরণে কোনোভাবেই মনে হয় না সে আত্মহত্যা করতে পারে।

এদিকে, হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর রহস্যের জট খোলেনি এখনও পর্যন্ত। নিখোঁজ হওয়ার ৯ দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে তার লাশের খোঁজ মিললেও কীভাবে তার মৃত্যু হলো সে সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।

হাফিজুরকে হত্যা করা হয়েছে বলে সন্দেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে হাফিজুরের সাথে শেষ আড্ডা দিয়েছিলেন তার যে তিন বন্ধু, তাদের সন্দেহের তালিকায় রাখছেন স্বজন ও সহপাঠীরা। ওই তিনজনকে পুলিশ ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।

পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মাসুম বলেন, আমাদের পুরো পরিবার এখন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। আমার বাবা-মা একটা একটা ট্রমার মধ্যে আছেন। আমরা এখন মামলা করার পরিস্থিতিতে নেই। বাব-মা সুস্থ হলে সিদ্ধান্ত নিবো মামলা করবো কি করবো না।

অন্যদিকে, হাফিজের মৃত্যুর ঘটনায় ২৪ মে সহকারী প্রক্টর লিটন কুমার সাহাকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মুহিত, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এম এল পলাশ ও মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য, বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী হাফিজুরের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবায়। ১৫ মে ঈদের পরদিন ঢাকায় এসেছিলেন হাফিজুর। ঢাকাতে কার্জন হল এলাকায় ১৫ মে দুপুরে আসিফ, অন্তু ও রাফসানের সঙ্গে আড্ডা দেন তিনি। ওই দিন রাত ৮টার পর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ