ঢাবি ছাত্র হাফিজের লাশ উদ্ধার, তিন বন্ধুকে নিয়ে ‘সন্দেহ’
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৫ মে ২০২১, ১১:৫৯ AM , আপডেট: ২৫ মে ২০২১, ১২:০৭ PM
নিখোঁজের ৯ দিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র হাফিজুর রহমানের গলা কাটা লাশ পাওয়া গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। হাফিজুরের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকের দাবি তাকে হত্যা করা হয়েছে। সহপাঠী ও স্বজনরা হাফিজুরের মৃত্যু জন্য দায়ী করছেন ঘটনার দিন হাফিজের সঙ্গে থাকা তিনজনকে।
হাফিজের স্বজন ও সহপাঠীরা জানান, ঈদের পরদিন হাফিজ বাড়ি থেকে ঢাকায় এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেন। বাপ্পি, রাফসান ও অন্তু নামে তিনজনের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছিলেন হাফিজ। এর মধ্যে বাপ্পি ঢাবির ফার্মেসি বিভাগের, অন্তু পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ ও রাফসান ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। সেদিন তারা কার্জন হল এলাকায় আড্ডা দিয়েছিলেন।
আরো পড়ুন হাফিজের মৃত্যুর ঘটনায় ঢাবি প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গঠন
তারা জানান, গত বছর করোনা শুরুর পর এই তিনজনের সঙ্গে হাফিজের পরিচয় ও সখ্যতা গড়ে ওঠে। করোনাকালে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় তাদের প্রায়ই টিএসসিসহ বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দিতে দেখা যেত। ওই তিনজন আগে থেকে বিভিন্ন মাদকে আসক্ত। এর মধ্যে বাপ্পি প্রেম করে বিয়ে করলে বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে অনেক হিংস্র আচরণ করতেন। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকাকালে হাফিজ মাঝেমধ্যে বাপ্পির চানখাঁরপুলের বাসায় থাকতেন।
সহপাঠী ও স্বজনরে কাছে এখন বেশ কয়েকটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ঈদের পরদিন হাফিজ কেন ঢাকায় এলেন। কারা তাকে ডেকে নিয়ে এসেছেন। কেনইবা তারা ডেকে এনেছেন। আবার যাদের সঙ্গে হাফিজ ছিলেন তারাই বা কেন হাফিজের সর্বশেষ অবস্থা অন্যদের জানালেন না।
হাফিজের বাড়ি পাশাপাশি এলাকা ও ঢাবি ছাত্র পলাশ। তিনি জানান, ঈদের পরদিন হাফিজকে কল করলে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ পান। এর একদিন পর হাফিজের বোনের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, হাফিজ ঈদের পরদিন ঢাকায় গেলেও তার কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না। পরে তিনি হাফিজের কথিত তিন বন্ধু বাপ্পি, রাফসান ও অন্তুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা হাফিজের বিষয়ে একেক সময় একেক রকম তথ্য দেন। বাপ্পি তাকে জানান, তারা সন্ধ্যার দিকে কার্জন হল এলাকায় আড্ডা দেওয়ার সময় হাফিজ বাড়ি ফিরে যেতে উদগ্রীব ছিল। সে নানা রকম এলোমেলো কথাবার্তা বলছিল। তাকে বাসস্টেশন পর্যন্ত এগিয়েও দিতে বলে। তারা মোটরবাইক নিয়ে বের হওয়ার সময় দোয়েল চত্বরের কাছে কার্জন হলে প্রবেশের গেট থেকে হঠাৎ করে মোটরসাইকেলের পেছন থেকে নেমে হাফিজ ঢাকা মেডিকেলের দিকে দৌড় দেয়। সে কয়েকবার চেষ্টা করে ঢাবির খেলার মাঠের সীমানা প্রাচীর দিয়ে লাফিয়ে ভেতরে ঢুকে পরে। এরপর তারা বেশ কিছুক্ষণ তাকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে বাসায় ফিরে গেছে।
আরো পড়ুন হাফিজুরের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি ছাত্রলীগের
বাপ্পির বক্তব্যের সঙ্গে রাফসান ও অন্তুর কথার মিল পাওয়া যায়নি বলে জানান পলাশ। রাফসান ও অন্তু পলাশকে জানায়, হাফিজ দেওয়াল বেয়ে ওঠার চেষ্টা করলেও উঠতে পারেনি। পরে সে ঢাকা মেডিকেলের দিকে দৌড়ে চলে যায়। নিখোঁজের বিষয়ে শাহবাগ থানায় জিডি করতে বলা হলে বাপ্পি প্রথমে জিডি করেছে বলে জানায়। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে এ তিনজনের সঙ্গে যতবার কথা হয়েছে তারা ভিন্ন ভিন্ন কথা বলেছে বলেও জানান পলাশ।
পলাশ আরও জানান, হাফিজের কোনো খোঁজ না পেয়ে ২১ মে কসবা থানায় জিডি করতে গেলে বাপ্পির কাছে শাহবাগ থানায় করা জিডির কপি চাওয়া হয়। তখন বাপ্পি জিডি করেনি বলে জানায়। এ ছাড়া হাফিজের ফোন, মানিব্যাগ ও একটি হ্যান্ডব্যাগ তার কাছে থাকলেও শুরু থেকে সেটিও জানায়নি। যেখানে ঘটনার দিন থেকে স্বজনরা ওই নাম্বারে কল করে বন্ধ পায়। বাপ্পি, রাফসান ও অন্তুকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে বলেও জানান পলাশ।
পুলিশ ও ঢামেক সূত্র জানায়, গত ১৫ মে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছন থেকে গলা কাটা অবস্থায় হাফিজুরকে উদ্ধার করা হয়েছিল। ওই সময় তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ডাব কাটার একটি দা দিয়ে তিনি নিজেই নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেছিলেন বলে সে সময় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র পুলিশকে জানিয়েছিল।
আরো পড়ুন ঢাবি ছাত্র হাফিজুরের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তসহ ৪ দাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি কী ঘটেছিল সেদিন তা বের করার জন্য কাজ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)।
শাহবাগ থানার ওসি মামুন-অর-রশিদ জানান, সবোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। যার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি হারুন-অর-রশিদ জানান, তিনজনের বিষয়ে তারা শুনেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মৃত্যুর পেছনে কারও ইন্ধন পাওয়া গেলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
আরো পড়ুন
ঢাবি ছাত্র হাফিজুরের লাশ: হত্যা নাকি আত্মহত্যা?
ঢাবি ছাত্রের গলা কাটা নিয়ে যা বলছেন সেই ডাব বিক্রেতা (ভিডিও)