চাকরি স্থায়ী না হলে ছাত্রলীগ নেতাদের আত্মহত্যার হুমকি

রাবিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে মারামারি
রাবিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে মারামারি  © ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের বিদায়কালে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়োগ স্থায়ী না করা হলে একযোগে প্রশাসন ভবনে গিয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন এডহকে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

আজ শনিবার (০৮ মে) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আব্দুস সালামের দপ্তরে গিয়ে এ কথা জানিয়েছেন নিয়োগপ্রাপ্তরা।

জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি রাবিতে তাদের তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চলে যাওয়ার পর অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ৩০-৪০ জন ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা বিকালে রেজিস্ট্রারের দপ্তরে গিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করেন।

এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রেজিস্ট্রারের জারি করা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে অ্যাডহকে নিয়োগ প্রদান করা ১৪১ জনকে চাকরিতে যোগদানের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার অনুরোধ জানান। তখন রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম- সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাইরে গিয়ে কিছুই করতে পারবেন না বলে জানালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ রেজিস্ট্রারকে বলেন, শিবিরের হামলায় আমি পা হারিয়েছি। বাম হাত দিয়েই কিছুই করতে পারি না। মাথায়ও প্রচণ্ড জখমের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া পুরো শরীরে শিবিরের ক্যাডাররা কুপিয়ে জখম-রক্তাক্ত করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চাকরি ছাড়া আমার অন্য কোনো কিছু করে জীবন ধারণ করা সম্ভব নয়। মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. আব্দুস সোবহান পিতার ভূমিকায় আমাদেরকে অ্যাডহকে চাকরি প্রদান করেছেন।

মাসুদ বলেন, যেহেতু ১৯৭৩-এর অ্যাক্ট মোতাবেক তিনি তার নিজস্ব ক্ষমতাবলে অ্যাডহকে নিয়োগ প্রদানের ক্ষমতা রাখেন। তাই স্যার, দয়া করে আমাদের প্রতি একটু সদয় হন। আমাদের অ্যাডহকে চাকরিতে যোগদানের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করেন। যদি আমরা চাকরিতে যোগদান করতে না পারি তাহলে আমার আত্মহত্যা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। আমি এই প্রশাসন ভবনেই আত্মহত্যা করব।

ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান সুমন বলেন, আমরা শিবিরের নির্যাতিত-নিপীড়িত ৫০-৬০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ আওয়ামী পরিবারের ১৪১ জন অ্যাডহকে নিয়োগ পেয়েছি। শেষ পর্যন্ত যদি আমাদেরকে যোগদান করতে দেয়া না হয় তাহলে আমরা সবাই মিলে প্রশাসন ভবনে এসে আত্মহত্যার পথটিই বেছে নেব।

এসময় উপস্থিত অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতাদের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন, তোমরা আমার সন্তানতূল্য। তোমরা ক্যাম্পাসে লড়তে গিয়ে যেমন ত্যাগ শিকার করেছ, তেমনি আমিও দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে রক্ত ঝরিয়েছি। তোমাদের কষ্টটা আমি বুঝি। তাই যদি সুযোগ থাকে, তবে অবশ্যই তোমাদের জন্য কোন ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে বিকেলে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে বিদায়ী উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৩-এর এ্যাক্ট ১২(৫) ধারা মোতাবেক উপাচার্যের নিয়োগ প্রদানের ক্ষমতা রাখে। সুতরাং সেই ক্ষমতা বলে আমি চাকরি প্রদান করেছি। যেখানে একটা সুস্পষ্ট আইন রয়েছে সেখানে কোন নিয়োগ অবৈধ হতে পারে না। যদি অবৈধ হতো তবে আইন বাতিল হতো।

এর আগে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্ত সকল নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে কোনোরূপ সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত নিয়োগপত্রের যোগদান এবং তদসংশ্লিষ্ট সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ প্রদান করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

অন্যদিকে শনিবার দুপুরে শিক্ষামন্ত্রনালয়ের নির্দেশ অমান্য করে নিয়োগ বাণিজ্য ও বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি দায়ে অভিযুক্তদের শাস্তি ও সকল নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ।