রাবির সকল নিয়োগ যৌক্তিক: বিদায়ী উপাচার্য
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যাল উপাচার্যের মেয়াদের শেষ সময়ে দেয়া এডহকের সকল নিয়োগ যৌক্তিক বলে দাবি করেছেন সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। শনিবার (৮ মে) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
উপাচার্য বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিন কোন নিয়োগ না হওয়ায় (২০১৩-২১) আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে আমরা তা বন্ধ রাখি। কিন্তু এর মাঝেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকের মুখে নিয়োগ বন্ধের গুঞ্জন শোনা যায়। পরে ডিসেম্বরের ১০ তারিখে সাক্ষরিত কিছু চিঠি ওই মাসের ১৩ তারিখে আমার কাছে আসে। সেখানে নিয়োগ বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ফলে আমি নিশ্চিত হই, যারা নিয়োগের বিরোধীতা করে আসছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছিলেন তারা এ খবর কিভাবে পেলেন? সুতরাং গুঞ্জন সত্যে পরিণত হলো।
এম আব্দুস সোবহান বলেন, আমরা যে নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম ও যেসব প্রার্থীরা আবেদন করেছিলেন তাদের সকল প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শেষ, শুধু ভাইভা বাকি। সুতরাং তারা চাকরি ডিজার্ভ করে।
‘‘আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রাখতে এই নিয়োগ না, আরো নিয়োগ না দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হবে এবং বিশ্বিবদ্যালয় মুখ থুবড়ে পড়বে’’
তিনি মন্ত্রণালয়ের তদন্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, এই যে সকল শিক্ষক শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে নিয়োগের বিরোধিতা করছিল, তাদের অভিযোগের ভিত্তিতেই মন্ত্রণালয় ও ইউসিজি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তারা আমার সাথে কোন কথা না বলে, সত্যতা যাচাই না করেই তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অথচ তারা আমার সাথে বসতে পারত, ঘটনা জানতে চাইতে পারত।
সাবেক এই উপাচার্য বলেন, এখন এই নিয়োগ যারা ডিজার্ভ করে তারা নিয়োগ পেয়েছেন। আমি মানবিকতাবোধ থেকে তাদের চাকরি দিয়েছি, কেননা, তাদের সময় যেভাবে ব্যহত হয়ে যাচ্ছিল। আর সবাই অনার্স-মাস্টার্স পাশ করেছে আর এই ডিগ্রি অর্জন করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির একটা চাকরির তারা যোগ্য, সুতরাং আমি মনে করি এটা যৌক্তিক। তাই আমি ছাত্রলীগকে চাকরি দিয়েছি।
তিনি সম্পূর্ণ নিজের দায়িত্বে এ নিয়োগ দিয়েছেন দাবি করে বলেন, তারা সাবাই আওয়ামীলীগ পরিবারের সন্তান সুতরাং তাদের ক্রমাগত চাপ ও দাবির মুখে আমি মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের চাকরি দিয়েছি। এটার সাথে অন্য কেউ জড়িত না।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে একরাতে ৫৪৪ জন চাকরি দিলে সবচেয়ে বেশি আন্দোলন ও প্রতিবাদ করেছিলেন এম আব্দুস সোবহান। এখন তিনি কেন এমন নিয়োগ দিলেন এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে উল্টো সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যখন সে নিয়োগ হয়েছিল তখন তো কোন নিষেধাজ্ঞা আসেনি, কোন তদন্ত করা হয়নি। তবে এখন কেন? তবে কি শুধু ছাত্রলীগকে চাকরি দিয়েছি বলেই এই তদন্ত, এই নিষেধাজ্ঞা কারণ জানতে চান তিনি।
তিনি বলেন, আমি তো কোন ব্যক্তি স্বার্থে তাদের চাকরি দেইনি। আমি যদি ব্যক্তি স্বার্থে চাকরি দিতাম তবে আমি অভিযুক্ত। আমার বিচার হওয়া উচিৎ। সুতরাং এখানে আমি কোন অনিয়ম দেখছি না।
নিয়োগের বিষয়ে আইনের বাধ্যবাধতার বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এক্ট ১২(৫) ধারা মোতাবেক উপাচার্যের নিয়োগ ক্ষমতা আছে। সুতরাং সেই ক্ষমতা বলে আমি চাকরি দিয়েছি। এখানে আইনের কোন ব্যত্বয় হয়নি।
অন্যদিকে নিয়োগ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের মন্ত্রনালয়ের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর জানান, আমরা নিয়োগ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সাক্ষাৎ করেছি। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। এর উপর ভিত্তি করে আমরা তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পাদন করব।
তিনি জানান, আমরা কারো পক্ষে বিপক্ষে তদন্ত করতে আসিনি। আমরা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে তদন্ত রিপোর্ট ৭ দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে জমা দেব।
প্রসঙ্গত, মেয়াদের শেষ সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের ১৩৭ নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই তদন্ত সম্পাদনের উদ্দেশ্য আজ শনিবার বিশ্বিবদ্যালয়ে এসেছেন কমিটির সদস্যরা। আগামীকাল থেকে শুরু হবে তদন্ত কার্যক্রম।