মোদিবিরোধী বিক্ষোভে ছাত্রলীগের তাণ্ডব, মোবাইল-টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ

ঢাবিতে প্রগতিশীল ছাত্রজোট সমূহের বিক্ষোভ
ঢাবিতে প্রগতিশীল ছাত্রজোট সমূহের বিক্ষোভ  © টিডিসি ফটো

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল বের করে বামপন্থীদের জোট ‘প্রগতিশীল ছাত্রজোট’। এতে হামলা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

ছাত্রলীগের হামলায় প্রগতিশীল ছাত্রজোটের বিভিন্ন ইউনিটের ১৪-১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, হামলার সময় একাধিক জনের কাছ থেকে মোবাইল, ম্যানিবাগ, ব্যাগসহ বিভিন্ন ধরণের ‘লজিস্টিক’ জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় আন্দোলনকারী গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সহ-সভাপতি ছায়েদুল হক নিশানের ব্যাগ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।

ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি শাখা কলা অনুষদের প্রচার সম্পাদক মাইন আহমেদের মোবাইল ভেঙে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রচার সম্পাদক কাজী রাকিব হোসেন। এছাড়াও অর্ণব চক্রবর্তী নামের এক বামপন্থী সংগঠকের কাঁধের ব্যাগও ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

ছাত্রলীগের হাত থেকে রক্ষা পাননি আইনশৃঙ্খলারক্ষকারী বাহিনীর সদস্যরাও। বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থার স্পেশাল ব্রাঞ্চে কর্মরত বুলবুল আহমেদকেও মারধর করা হয়েছে। এসময় তার কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নেয়া হয়েছে। ঢাবি এরিয়ায় কর্মরত গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বিষয়টি জানিয়েছেন। এছাড়া মশাল মিছিলে হামলার ছবি তোলার সময় এক ফ্রিল্যান্সার সাংবদিকের ক্যামেরাও ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

এর আগে গতকাল বিকেল ৫.০০টার দিকে নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদ, সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে হত্যার শিকার ফেলানিসহ সকল নিহতদের স্বরণে ‘প্রতিবাদী জেয়াফত’ অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের হামলার ছবি তোলার সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উৎপল বিশ্বাসের নেতৃত্বে বাংলা ট্রিবিউনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টার আবিদ হাসান রাসেলের উপর হামলা করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এসময় তার কাছ থেকে মোবাইল ও প্রেস কার্ড ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা।

হামলায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম রিয়াদ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখার আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, সার্জেন্ট জহুরুল  হক হল ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক তানসেন শেখ, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তামিম, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক সম্পাদক কাজী তানভীর আহমেদ অংশ নেয়।

এরপরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রগতিশীল ছাত্রজোটের মশাল মিছিলের সংবাদ সংগ্রহের সময় ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টার আসিফ হাওলাদার। এসময় আসিফের ম্যানিব্যাগও ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। সেখানে তার প্রায় ৫ হাজারের মত ছিলো বলে তিনি জানিয়েছেন।

সার্বিক বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য  বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস কে জানান কে জানান, সাংবাদিকদের উপর হামলার বিষয়টি অনভিপ্রেত। এ বিষয়ে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। হামলায় যে বা যারা জড়িত তদন্ত সাপেক্ষ তাদের বিষয়ে সাংগাঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান সাদ্দাম।

প্রগতিশীল ছাত্রজোটের মশাল মিছিলে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বামপন্থীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এসব হয়েছে। ওই সমস্ত বিষয়ে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নয় বলে জানান এই ছাত্রনেতা।


সর্বশেষ সংবাদ