বন্ধ ঢাবি ক্যাম্পাসে মাদকের আখড়া
গত বছরের মার্চের মাঝামাঝি থেকে বন্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসে সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও থেমে নেই অবাধে মাদকদ্রব্য সেবন। যদিও ক্যাম্পাসে মাদক সেবনের বিষয়ে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন; তবুও অবাধে চলছে মাদকদ্রব্য সেবন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাবির ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, সায়েন্স এনেক্স ভবন, টিএসসি ও কার্জন হল মাদক সেবনের বড় আস্তানা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সন্ধ্যা ৭টার পর বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করায় সেখানে সেবন কমেছে। তবে চারুকলা থেকে রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত ফুটপাতে (উদ্যানের পাশে) ফেনসিডিল ও গাঁজা সেবন চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহিরাগতরাও মাদক সেবন করেন। উদ্যানের গেটের কাছে ভাসমান দোকানদারদের বিরুদ্ধে গাঁজা বিক্রির অভিযোগ পুরোনো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিএসসি’র এক দ্বাররক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে এসে বন্ধু-বান্ধব বা রিলেটিভ বলে টিএসসি’র ভেতর প্রবেশ করে। পরবর্তীতে দেখি তারাই মাদক সেবন করে। আমাদেরও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। সবাইকে টিএসসিতে প্রবেশে বাধা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে উঠে না।
টিএসসির ভেতরের ওয়াশরুমে ময়লা, টিস্যু ফেলার জায়গায় মদ, ফেন্সিডিল’র বোতল পাওয়া যায় যা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বা পরিস্থিতির সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন পরিচ্ছন্নের দায়িত্বে থাকা টিএসসির এক পরিচ্ছন্ন কর্মী।
কার্জন হল গেইটের এক দ্বাররক্ষক বলেন, রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক /বর্তমানরা এসে ভেতরে ঢুকার জন্য চেষ্টা করে। তাদের বাধা দিলে তারা আমার উপর চড়াও হতে চায় তাই বাধ্য হয়ে তাদের কে প্রবেশ করতে দিতে হয়। ঠিক সে মুহূর্তে নিজের নিরাপত্তার, সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনা করে তাদের কে ঢুকতে দেওয়া হয় বলে জানান ঐ দ্বাররক্ষক।
এদিকে গোয়েন্দা রিপোর্ট ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাদক কারবারিতে জড়িত রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেকরা। তাদের ছত্রছায়ায় অন্যরা মাদক বিক্রি ও সেবন করে ধাকে। কেউ পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও প্রভাব খাটিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নেয়া হয়।
গোয়ন্দা প্রতিবেদন ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ক্যাম্পাসে মাদকের সহজলভ্যতার জন্য ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনকে দায়ী করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ইতিহাস বিভাগের এক শিক্ষার্থী। শুধু তাই নয়; প্রক্টরিয়াল টিমের অসতর্কতাকেও দায়ী করেছেন তিনি।
ওই শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় বহিরাগতরা এসে মাদক সেবন করে তা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
মাদক সেবন ও বিক্রির সাথে ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টটার বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তারা ফোন ধরেননি।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাদকদ্রব্য কারা নিয়ন্ত্রণ করে? এ বিষয়ে কোন তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এএসআই) রইস উদ্দিন বলেন, আমাদের কাছে আপডেটেট কোন তথ্য নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। ঐখানে আমরা স্ব-উদ্যোগে অভিযান পরিচালনা করতে পারিনা।
গত এক বছরে ক্যাম্পাসে মাদক সেবন করতে গিয়ে আটককৃতদের তথ্য জানতে শাহবাগ থানার ইনচার্জ (ওসি) মামুন-অর রশিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে, বিভিন্ন সময় যারা ঢাবি ক্যাম্পাসে মাদক সেবন করতে গিয়ে ধরা পড়ে তাদের শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে পরবর্তীতে ক্যারিয়ারের কথা বিবেচনা করে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বন্ধ ক্যাম্পাসে মাদক সেবনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে আমরা জিরো টলারেন্সে আছি। অনেক সময় জড়িতদের গ্রেফতার করে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে প্রক্টরিয়াল মোবাইল টিম সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।