১৮ মার্চ ২০২১, ২০:০২

সারাদিন মধুর ক্যানটিন দখলে রাখলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা

  © সংগৃহীত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগামী ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় আসার কথা রয়েছে৷ তার আসার বিরোধিতা করে কর্মসূচি ঘোষণা করতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছিল বামপন্থী সংগঠনগুলো। অথচ সকাল থেকেই পুরো মধুর ক্যানটিন দখলে রাখেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দুইশতাধিক নেতাকর্মী সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে স্লোগান দেন।

সাধারণত মধুর ক্যানটিনের ভেতরে পূর্ব পাশে বসেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা৷ উত্তরে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আর পশ্চিম-দক্ষিণে বসেন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা৷ আজকের সংবাদ সম্মেলনকে ঘিরে পুরো মধুর ক্যানটিন দখলে রাখেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা৷

দুপুর ১২টায় মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করতে এসে জায়গা না পেয়ে ক্যানটিনের পশ্চিম পাশের গেটে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রিসহ নয়টি বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের আধা ঘণ্টার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়৷ পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পশ্চিম পাশের গেটের সামনে দাঁড়িয়েই সংবাদ সম্মেলন করেন তারা৷

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘দুপুর ১২টা থেকে মধুর ক্যানটিনে আমাদের সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পুরো জায়গাটি দখল করে রেখেছে৷ ছাত্রলীগ শুধু মধুর ক্যান্টিন দখলে রাখছে না, পুরো ক্যাম্পাস এবং হলগুলোতেও দখলদারিত্ব কায়েম করেছে৷ আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই৷’

জানতে চাইলে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বাম ছাত্র সংগঠনগুলো এমন কিছু হয়ে যায়নি যে, তাদেরকে লক্ষ্য করে ছাত্রলীগের আলাদা কর্মসূচি দেওয়ার প্রয়োজন আছে৷ ছাত্রলীগ প্রতিদিনের মতো মধুর ক্যানটিনে স্বাভাবিক কার্যক্রম পালন করেছে৷ বাম ছাত্র সংগঠনগুলো দিন দিন জঙ্গি সংগঠনের পরিণত হচ্ছে৷ তাদের প্রতিহত করতে ছাত্রলীগের প্রয়োজন নেই, সাধারণ শিক্ষার্থীরাই তাদের জঙ্গি কার্যক্রম প্রতিহত করবে৷’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ৷ তিনি নরেন্দ্র মোদির আসার বিরোধিতা করে কর্মসূচি ঘোষণা করেন৷ ১৯ মার্চ বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ ও মিছিল এবং ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় মশাল মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়৷

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একটি ভয়াবহ দুঃসময়ের মধ্যে আমরা আছি। শুধুমাত্র সরকারের সমালোচনা করার কারণে লেখক মোশতাক আহমদকে কারাগারে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। কার্টুন আঁকার কারণে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছে কার্টুনিস্ট কিশোরকে। শ্রমিক নেতা রুহুল আমিনসহ এখনো অনেকে কারাবন্দী। মানুষের সমস্ত ধরনের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

তারা আরও বলেন, ‘ভারতের দাঙ্গাবাজ, সাম্প্রদায়িক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্ত্রীতে আমন্ত্রণ জানানো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী। মোদির হাতে গুজরাটের হাজার হাজার মানুষের রক্তের লেগে আছে। গতবছর দিল্লি কিলিংয়ের ঘটনা মোদি সরকারের নির্দেশে ঘটেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক আল কাদেরী জয়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদ রানা, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবীর প্রমুখ৷ সংবাদ সম্মেলন শেষে মধুর ক্যান্টিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা।