দেশের ৮৬ শতাংশ শিক্ষার্থী হতাশ, পড়তে বসেন না ৬৪.২ শতাংশ

প্রতীকী
প্রতীকী

করোনার দীর্ঘ ছুটিতে একঘেয়েমি মনোভাব, মানসিক বিপর্যস্ততা ও হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন দেশের ৮৬.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া একাডেমিক পড়াশুনা থেকে সম্পৃক্ততাহীন হয়ে পড়েছে ৬৪.২ শতাংশ শিক্ষার্থী। তবে ৬৩.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলেও তাদের পারিবারিক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘দ্যা সেভ আওয়ার সোসাইটি’র উদ্যোগে আয়োজিত ‘অনলাইন জরিপ ২০২০’-এর প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপে বিভিন্ন অঞ্চলের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যলয় পর্যায়ে অধ্যায়নরত ১ হাজার ৫০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। যেখানে শিক্ষার্থীদের সার্বিক পরিস্থিতির পাশাপাশি নিজেদের উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্ক, শিক্ষা ও বিভিন্ন কার্যক্রম এবং কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত জানতে চাওয়া হয়।

অনলাইন জরিপে দেখা যায়, করোনার দীর্ঘ ছুটিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৪.২ শতাংশ শিক্ষার্থীর একাডেমিক পড়াশুনায় কোন সম্পৃক্ততা নেই। যেখানে করোনা সংক্রমণের পূর্ববর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশুনায় নিয়মিত সম্পৃক্ততা থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনিক কাজ করেছে ৫২.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী।

জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৮৬.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বলছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণে দীর্ঘদিন বাসায় থাকার ফলে তাদের মধ্যে একঘেয়েমি মনোভাব চলে আসছে, এতে করে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন।

তবে জরিপে অংশ নেওয়া ৬৩.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলেও তাদের পারিবারিক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে।

৩৪.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বলছে, বাইরের বন্ধুদের সাথে তাদের যোগাযোগ কমেছে। যেখানে প্রথম আলো তারুণ্য জরিপ-২০১৯ অনুযায়ী ৫৮.১ শতাংশ তরুণ শিক্ষার্থী বাইরের বন্ধুদের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। তবে ১৭.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী করোনা সময়েকালে নতুন কিছু করার মাধ্যমে নিজেদের কর্মব্যস্ত করে তোলেন।

করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও সামাজিক কার্যক্রম নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. গৌতম রায় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার্থীরা দিনের পর দিন বাসায় বসে ছিলেন। আমাদের নীতি নির্ধারকের মধ্যে একটা সময় পর্যান্ত এই বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ছিলনা।

জরিপের ফলাফল

শিক্ষার্থীদের সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিয়ে তিনি বলেন, অধিকাংশ সামাজিক সংগঠনগুলো হলো বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক। বাসায় যাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা সামাজিক সংগঠনে কাজ করার জন্য যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা দরকার তারা সেটি পায় না। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার এগুলো অন্যতম কারণ।

বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আশিক শাহরিয়ার বলেন, গত মার্চ থেকে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। এক বছরের মধ্যে আমাদের ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখা থেকে দূরে সরে গেছে। মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে আমাদের ছেলে-মেয়েরা অনেকটাই হতাশা ও বিষন্নতার মধ্যে আছে।

তিনি বলেন, এই যে মানসিক চাপটা একেক বয়সের একেক রকম। যারা ছোট তাদের মধ্যে এক রকম, আবার যারা বড় তাদের মধ্যে আরেক রকম। এই প্রভাবটি শুধু শিক্ষার্থীদের উপর পড়ছে তা নয়। এটা পুরো পরিবারের উপরই পড়ছে। এই জায়গাটাতে শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণ করার মত কেউ নেই। আমাদের পরিবারের মানুষরাও মানসিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতন না বলেও জানান তিনি।

‘সেভ আওয়ার সোসাইটির’ নামক স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাল্যবিবাহ, যৌন নিপীড়ন, মাদক ও ইন্টারনেট আসক্তি বিষয়ক জরিপ পরিচালনা করাসহ যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেফজোন তৈরীর মাধ্যমে নারী শিক্ষার্থীদের সুরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে।


সর্বশেষ সংবাদ