বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে সরব শিক্ষার্থীরা, পাশে ছাত্র নেতারাও
বরিশাল এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার পর অনেকটা আকস্মিকভাবেই আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে সরব হয়ে উঠেছেন দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত কয়েকদিন থেকে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন চলছে। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারাও।
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজ উল্যাহ বলেন, দেশের সবকিছু প্রায় আগের মতো চললেও শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে আছে। এতে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। এর ফলে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যাও করেছেন। এ ছাড়া বরিশাল ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর হল খোলার দাবি আরও বেগবান হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হল খোলার দাবি যৌক্তিক।
এদিকে ক্যাম্পাস ও সব হল খুলে দেয়ার দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবাসিক হল না খােলা হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুমকিও দেয়া হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী মাহমুদ সাকি বলেন, শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি চলতে পারে না। এক বছর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আর এক দিনও ক্যাম্পাস-হল বন্ধ থাকতে পারে না। আমরা ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই। হলে ফিরতে চাই। আমরা আন্দোলনে নেমেছি, হল-ক্যাম্পাস না খোলা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
রাবি ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহাব্বত হোসেন মিলন বলেন, অনেক বিভাগে পরীক্ষা চলছে; কিন্তু হল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বাইরে থাকতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হচ্ছে। দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়রা হামলা চালিয়েছে। তারা হলে থাকলে স্থানীয়রা হামলা চালানোর সুযোগ পেত না। রাবির কোনো শিক্ষার্থী যে বহিরাগতদের হামলার শিকার হবে না, তার নিশ্চয়তা কী?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ১৩ মার্চ থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেওয়া হবে। গত ৩১ জানুয়ারি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হল খোলার দুই সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা আশা করছি, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খোলার বিষয়ে প্রশাসন একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে।
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যেন নষ্ট না হয়, এ বিষয়ে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য অতি দ্রুত সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল ও ক্যাম্পাস যেন খুলে দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশরাফী নিতু বলেন, আবাসন সংকটের কারণে মূলত জাহাঙ্গীরনগর ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। আমরাও হল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। দ্রুত ক্যাম্পাস ও হল খুলে না দেওয়া হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।