২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:৫৫

জাবি সংকট: করণীয় নিয়ে দিশেহারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

জাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ প্রশাসনকে নতুন সংকটে ফেলেছে। ক্যাম্পাস সংলগ্ন গেরুয়া গ্রামের স্থানীয়দের সঙ্গে শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এ সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত হয়ে প্রায় ১৫ জন সাভারের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে অনিরাপদ বোধ করছে।

শনিবার (২০শে ফেব্রুয়ারি) সকাল দশটা থেকেই আবাসিক হল খোলাসহ তিন দফা দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে সংগঠিত হয়। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর হতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। পরে সেখানে ‘এক দফা এক দাবি, আজকে হল খুলে দিবি’শ্লোগানে ভিসি-ভবন মুখরিত করে তোলে।

পরবর্তীতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে হল খোলার ব্যাপারে আলোচনা করলে প্রশাসন অসম্মতি জানায়। এ পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা হলের তালা ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে হল অভিমেুখে রওনা দেয়।
প্রথমে আল-বেরুনী হলের তালা ভেঙ্গে আন্দোলন কারীরা মেয়েদের হলের দিকে অগ্রসর হয়। সেখানে একে একে মেয়েদের আটটি হলের তালা ভাঙ্গে শিক্ষার্থীরা। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সমানে অমর একুশের পাদদেশে নতুন তিনটি দাবি উত্থপান করেন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে ছেলেদের হলের দিকে অগ্রসর হয়।

আন্দোলনের প্রথম পরর্যায়ে হল খোলা, আহতদের চিকিৎসা ব্যায় বহন, গেরুয়া সংলগ্ন গেট স্থায়ীকরণ সহ তিনটি দাবি ছিলো। তবে সময়ের প্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীরা সংঘর্ষের ঘটনায় প্রক্টরের বক্তব্য প্রত্যাহার পূর্বক ক্ষমা প্রর্থনা ও পদত্যাগ; স্থানীয় দুষ্কৃতীকারীদের চিহ্নিত করে সাত দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার এবং হলের গ্যাস বিদ্যুৎ ও পানি সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

পুরো ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকারি নির্দেশনার বাইরে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছে না। এব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট বশির আহমেদ বলেন, ‘এ মুহূর্তে সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খোলার অভিপ্রায় নেই প্রশাসনের। আমরা পুরো ব্যাপারটি পর্যবেক্ষণ করছি।’

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক। তাই আমরা আমাদের দাবি বাস্তবায়নে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।’

এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন ও আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট, বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হামলার ঘটনায় নিন্দা ও দাবির প্রতি সংহতি জানায়।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গেরুয়া বাজারে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে জাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়। এ সময় স্থানীয়দের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের চারটি মোটরসাইকেল ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বেশকিছু দোকান ভাংচুর করার অভিযোগ ওঠে।