‘আচ্ছা ভাইয়া, জেল থেকে কি বিসিএস ভাইভা দেয়া যায়?’
- খালেদ মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২১, ০৩:৫৫ PM , আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:৫৯ AM
আমি যখন খুব ছোট ছিলাম, তখন মা মারা যায়। এর কিছুদিন পরই বাবা আরেকটা বিয়ে করে নেন। কিন্তু চিরাচরিত নিয়ম! সৎ মায়ের সাথে আমাদের মিল হলো না। পরিস্থিতি এক পর্যায়ে আরো খারাপের দিকে যেতে থাকল; তখন অনেকটা বাধ্য হয়েই ভাইয়ার সঙ্গে সাভার খালার বাসায় চলে আসি। সেখানেই ভাইয়ার সঙ্গে থাকতে শুরু করি।
বলতে গেলে— বড় ভাইয়াই ছিল আমার একমাত্র অবলম্বন। আশা ছিল, ভাইয়ার পড়াশোনা শেষে ভালো একটা চাকরি পাবে। তখন আমাদের সব দুঃখ ঘুচে যাবে। কিন্তু ভাগ্য সায় দিল না। এর মাঝেই ২০১৯ সালের শেষ দিকে বাবা চলে যান। সত্যি বলতে কী বাবা-মা ছাড়া এই পৃথিবীতে আমাদের আপন বলে কেউ ছিল না।
তারপরও ভাইকে আকড়ে ধরে ছিলাম। ও-ই ছিল আমার একমাত্র অবলম্বন। সবকিছুই সুন্দরভাবে চলছিল। সর্বশেষ ৪০তম বিসিএস রিটেনের ফল প্রত্যাশী ছিল ভাইয়া। গত সপ্তাহে রিটেনে উত্তীর্ণের ফল শুনে আমাদের আনন্দে উদ্ভাসিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস যখন ভাইয়ার রিটেনে উত্তীর্ণ ফলাফল আসল; তখন সে কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে বন্দী। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়ে তাকে মিথ্যা মামলায় জেলে বন্দি থাকতে হচ্ছে।
৪০তম বিসিএস ভাইভা শুরু হতে মাত্র ১৫ দিন বাকি। কিন্তু এখনও জানিনা তার আগে ভাইয়ার মুক্তি মিলবে কিনা? সারাক্ষণ দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকি। কত স্বপ্ন ছিল আমাদের। সব স্বপ্ন যেন ধূলিসাৎ হওয়ার পথে। কথাগুলো বলতে বলতেই এক পর্যায়ে কেঁদে উঠলেন শাকিল আহমেদ।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাকিল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আচ্ছা ভাইয়া, ভাইভার আগে ভাইয়ার জামিন হবে তো? জেল থেকে কি বিসিএস ভাইভা দেওয়া যায়?’
শাকিল ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামের ছোট ভাই। ঢাবি ছাত্রীর ধর্ষণ মামলার অভিযোগ মাথায় নিয়ে বর্তমানে সাইফুল কারাগারে আছেন। আর শাকিল এবার শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হসপিটাল নার্সিং ইনস্টিটিউটের (টাঙ্গাইল) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলায়।
জানা গেছে, ঢাবির ছাত্রীর করা মামলায় তার বিরুদ্ধে সরাসরি ধর্ষণের অভিযোগ নেই। এ মামলায় প্রধান আসামীও নয় সাইফুল ইসলাম। আসামি পক্ষের আইনজীবী খাদেমুল ইসলাম বলেন, দুই আসামির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নেই৷ তাছাড়া তারা মূল আসামি নয়।
গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে কতোয়ালী থানায়ও একই অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের করেন ওই ছাত্রী।
পরে ১১ অক্টোবর রাতে গ্রেফতার করা হয় মামলার দুইজন আসামী বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম ও সংগঠনের ঢাবি শাখার সহ-সভাপতি মো. নাজমুল হুদাকে। লালবাগ থানায় করা ধর্ষণ মামলায় জামিনের শুনানির অপেক্ষায় থাকলেও কোতয়ালি থানার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গত ২২ ডিসেম্বর দুই নেতার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ।
সাইফুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১২-১৩ সেশনের শিক্ষার্থী এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম- আহ্বায়ক।